আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রায় দেড় বছর ভয়াবহ সংঘাতের পর গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বিরতি চুক্তি সম্মত হয়েছে ইসরায়েল এবং উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস; আর এই চুক্তির কৃতিত্ব দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং আসন্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয়েই।
এ উপলক্ষে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
দুই পক্ষ গাজায় যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে চূড়ান্ত সম্মতি দিয়েছে— এমন খবর প্রচারিত হওয়ার পর বুধবার হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে জো বাইডেন বলেন, “আমি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সন্তুষ্ট। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং এ যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারীদের ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার ফলেই এ চুক্তি সম্ভব হয়েছে।”
চূড়ান্ত চুক্তি অনুযায়ী, বাইডেন যেদিন বিদায় নেবেন— তার একদিন আগে ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে গাজায়।
বাইডেন জানান, এই যুদ্ধবিরতির তিনটি স্তর বা পর্যায় রয়েছে। প্রথম স্তরে রাফাসহ গাজার অন্যান্য জনবহুল এলাকাগুলো থেকে সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে এবং ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি প্রায় ১ হাজার ফিলিস্তিনির মুক্তির বিনিময়ে নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের একাংশকে মুক্তি দেবে হামাস। এই দফায় যেসব জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে, তাদের মধ্যে বয়স্ক এবং নারীরা প্রাধান্য পাবেন।
স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস এবং ইসরায়েল— দু’পক্ষের ঐকমত্যের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে গাজায় শান্তি পরিকল্পনার প্রথম স্তর বা পর্যায় এবং তারপর শুরু হবে পরিকল্পনা ২য় পর্ব। এই পর্বে নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের সবাইকে মুক্তি দেবে হামাস এবং তার বিনিময়ে আরও বেশি সংখ্যক কারাবন্দি ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন এবং গাজার বাসিন্দারা পাবেন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি।
পরিকল্পনার তৃতীয় পর্যায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ভবন-রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
“শিগগিরই জিম্মিরা তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পারবেন। ইসরায়েলের কারাগারে যেসব ফিলিস্তিনি বন্দি আছেন, তারাও বাড়ি ফিরতে পারবেন। মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ-সংঘাতের পর্যায় থেকে স্থায়ী ভাবে বেরিয়ে আসছে। এই চুক্তি তার প্রাথমিক পদক্ষেপ।
এদিকে প্রায় একই সময়ে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে যারা জিম্মি অবস্থায় আছেন, তাদের মুক্ত করতে আমরা একটি চুক্তি করতে পেরেছি। শিগগিরই তারা মুক্তি পাবেন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।”
তিনি আরও বলেন, “২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার সংবাদ শুনে আমি রীতিমতো কেঁপে উঠেছিলাম। কারণ জিম্মিদের মধ্যে অনেক মার্কিন নাগরিক ছিলেন।
“এটি একটি মহাকাব্যিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং গত নভেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনের ফলাফল। গাজা যেন আর কখনো সন্ত্রাসীদের নিরাপদ স্বর্গ না হয়, সেজন্য আমার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ইসরায়েল এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের অন্যান্য মিত্রদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।
জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি বাহিনীর গত ১৫ মাসের অভিযানে গাজায় নিহত হয়েছেন ৪৬ হাজার ৭০৭ জন এবং আহত হয়েছেন দেড় লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি।
সূত্র : বিবিসি, এএফপি