নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্রাহকের অর্থ উত্তোলনের পাশাপাশি তাদের টাকা জমা নেওয়ার সুবিধা দিচ্ছে ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম)। ফলে দিন দিন যন্ত্রটির ব্যবহার বাড়ছে। এতে ব্যাংকগুলোর কমছে খরচ। একই সঙ্গে গ্রাহকসেবা প্রদান সহজ ও দ্রুত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত নভেম্বর শেষে ব্যাংকের সিআরএম মেশিনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৫১টি। কিন্তু পাঁচ মাস আগে এর সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৬২৬টি। অর্থাৎ পাঁচ মাসে সিআরএম মেশিন বেড়েছে এক হাজার ২২৫টি।
একই সময় কমেছে এটিএম বুথের সংখ্যা। গত বছরের জুনে দেশে যেখানে মোট এটিএম বুথের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৪৩৮টি। গত নভেম্বরে সেই সংখ্যা কমে ১৩ হাজার ৩টিতে নেমেছে। অর্থাৎ পাঁচ মাসে এটিএম বুথ কমেছে ৪০৫টি।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) কমেছে। অন্যদিকে বেড়েছে সিআরএমের সংখ্যা। সিআরএমে টাকা জমা ও উত্তোলনের সুবিধা দেওয়া যায়। ফলে এটিএমের চেয়ে সিআরএম স্থাপনে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে ব্যাংক। যার কারণে ব্যাংকগুলোর খরচ অনেক সাশ্রয় হচ্ছে; একই সঙ্গে স্বল্প জায়গায় সহজে দ্রুত গ্রাহকসেবা দিতে পারছে।
এটিএম-সিডিএমের পর সিআরএম
দেশে ১৯৯২ সালের আগ পর্যন্ত টাকা জমা ও উত্তোলনের জন্য ব্যাংকের শাখাই ছিল একমাত্র মাধ্যম। ওই বছরই দেশে প্রথম এটিএম বুথ স্থাপন শুরু করে ব্যাংকগুলো। যা দিয়ে শুধু টাকা উত্তোলন করতে পারতো। কিন্তু টাকা জমা দেওয়ার জন্য গ্রাহকদের ব্যাংকের শাখাতেই যেতে হতো।
২০১০ সালের দিকে ক্যাশ ডিপোজিট মেশিন (সিডিএম) নামে টাকা জমা নেওয়ার যন্ত্র বসানো শুরু করে ব্যাংকগুলো। তবে এ সেবায় গ্রাহকেরা যন্ত্রে টাকা জমা দিলেও তা তাৎক্ষণিক হিসাবে জমা হতো না। ব্যাংক কর্মকর্তারা দিনে একবার জমা করা টাকা শাখায় নিয়ে জমা করেন। দুপুরের পর টাকা জমা হলে তা পরের দিনের হিসাবে চলে যায়। ফলে সিডিএম পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা জমা না হওয়ায় গ্রাহকদের অনেকেই সমস্যায় পড়েন। সে জন্য এই সমস্যার সমাধানে ২০১৭ সালের জুনে দেশে প্রথমবারের মতো সিআরএম চালু করে বেসরকারি সিটি ব্যাংক। এরপর অন্য ব্যাংকগুলোও যন্ত্রটির ব্যবহার শুরু করে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে একই সঙ্গে টাকা জমা ও উত্তোলন করা যায়।
সিআরএম মেশিনের সংখ্যা বাড়ার বিষয় জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অরূপ হায়দার বলেন, এটিএমে শুধু টাকা উত্তোলন করা যায় অন্যদিকে সিআরএমে টাকা জমা ও উত্তোলন অর্থাৎ এক মেশিনে দুটি সেবা দেওয়া যাচ্ছে। গ্রাহক তার সুবিধামতো সময় টাকা জমা করতে পারছেন। এ ছাড়া টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় উত্তোলনের জন্য এ যন্ত্রে বেশি পরিমাণ টাকাও রাখতে হয় না। এসব কারণে সিআরএম পদ্ধতি ব্যবহার ব্যাংকের জন্য সুবিধাজনক। এই মেশিন অনেকটা মিনি ব্রাঞ্চের মতো কাজ করে। এতে করে ব্যাংকের খরচ কমছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলো সিআরএমের ব্যবহার বাড়াচ্ছে।
সিআরএমের সুবিধা
ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সিআরএম ব্যবহারে সবচেয়ে বড় সুবিধা নগদ টাকার লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবেই করা যায়। অর্থাৎ সিআরএম সুবিধা থাকায় গ্রাহকদের ব্যাংকে টাকা জমা করতে এখন আর ব্যাংকিং সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। সিআরএমের মাধ্যমে যেকোনো সময়ই টাকা লেনদেন করা যাচ্ছে। সিডিএম পদ্ধতিতে খামে ভরে টাকা জমা দিতে হয়; এতে সাধারণত এক দিন লেগে যায়। কিন্তু সিআরএমে তাৎক্ষণিকভাবেই টাকা জমা হয়ে যায়।
সিআরএম যন্ত্রে গ্রাহকেরা যেকোনো পরিমাণে টাকা জমা দিতে পারেন। প্রতিবারে দেড় শতাধিক নোট জমা দেওয়া যায়। সিআরএম ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট গুনে নিচ্ছে এবং দিচ্ছেও। টাকা আসল না জাল, তা–ও ধরা পড়ছে সিআরএমে। জমার স্লিপে থাকছে টাকার নম্বরসহ কী পরিমাণ জমা হলো, সেই হিসাব। যন্ত্রটি প্রতি সেকেন্ডে ৮-১০টি নোট গুনতে সক্ষম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, নভেম্বর শেষে কার্ডের (ক্রেডিট, ডেবিট, প্রিপেইড) সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৯৩টি। আর এসব কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয় ৪ হাজার ৯৩ কোটি টাকা।