আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেনকে লক্ষ্য করে রাশিয়ার সর্বসাম্প্রতিক বিমান হামলা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মোটেই আশাহত করছে না। যুক্তরাষ্ট্র এখনও ব্যাপকভাবে আশাবাদী, শিগিগরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারবেন তিনি।
শুক্রবার রাতভর দেশজুড়ে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। হামলায় ইউক্রেনের পাঁচটি অঞ্চলে লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানা হয়। এতে আবাসিক ভবনগুলোর ক্ষতি হয় এবং বাসিন্দারা আহত হন।
তবে শুক্রবার ওভাল অফিসে এক ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন যে তিনি শান্তি চান, তখন পুতিনের কথা বিশ্বাস করেন তিনি।” ট্রাম্প বলেন, “আমি তাকে বিশ্বাস করি। আমার মনে হয় আমরা রাশিয়ার সঙ্গে খুব ভালো করছি। অবশ্য এটাও সত্য যে এই মুহূর্তে রাশিয়া ইউক্রেনে প্রচণ্ড বোমা বর্ষণ করছে।”
পুতিন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমার মনে হয় তিনি (ইউক্রেনে) আগের চেয়ে আরও শক্ত আঘাত করছেন এবং সম্ভবত পুতিনের অবস্থানে অন্য যে কেউ থাকলে তিনিও তাই করতেন।”
কিয়েভের ব্যাপারে নিজের অব্যাহত হতাশাও গোপন করেননি ট্রাম্প। তিনি বলেন, “সত্যি বলতে কি, ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করা আরও কঠিন হয়ে উঠছে। তাদের হাতে কোন কার্ড নেই।” যখন জানতে চাওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্র কি ইউক্রেনকে আরও আকাশ প্রতিরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে, ট্রাম্প বলেন, তা ইউক্রেনের ওপর নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, “আমার জানতে হবে তারা যুদ্ধের সমাপ্তি চায় কি না। আমি এখনও তা স্পষ্টভাবে জানি না। তারা যদি নিষ্পত্তি না চায়, তাহলে আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসবো; কারণ আমরা এ যুদ্ধের অবসান চাই।”
ট্রাম্পের রাশিয়া ও ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে আনার কৌশল হিসেবে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করা বন্ধ করেছে মার্কিন প্রশাসন। ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপ ইউক্রেনের নিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে বলে ইতোমধ্যে সমালোচনাও শুরু হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা অবশ্য এসব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তরের পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজকে বলেন, গোয়েন্দা তথ্য জানানোর ব্যাপারে যে বিরতি দেওয়া হয়েছে তার লক্ষ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অভিযান থেকে ইউক্রেনকে বিরত রাখা।
তবে যদি রাশিয়ার হামলার কারণে ইউক্রেন অস্তিত্ব সংকটে পড়ে, সেক্ষেত্রে দেশটিকে ফের গোয়ান্দা তথ্য প্রদান শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন গ্যাবার্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদরদপ্তর পেন্টাগনের এক কর্মকর্তাও ভয়েস অফ আমেরিকাকে নিশ্চিত করেছেন, ইউক্রেনের নিজের প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহে কোনো বিরতি আসেনি। শুক্রবার রাতের হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের কল্যাণে অনেকগুলো ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা সেই বার্তায় জেলেনস্কি আরও বলেন, “তিনি লেখেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টিমের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচুর কাজ চলছে, টেলিফোনেও কথাবার্তা চলছে। আর বিষয়টি পরিষ্কার—যত শিগগির সম্ভব শান্তি এবং যতটা সম্ভব নির্ভরযোগ্যভাবে নিরাপত্তা দরকার। গঠনমূলকভাবে এগিয়ে যেতে ইউক্রেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা।