নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই আন্দোলনে ছেলে-মেয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে লড়াই করেছে। কিন্তু আমরা এখন রাস্তায় বের হলেই মবের শিকার হই। অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা এখন চুপচাপ আছে। এর ধারাবাহিকতা কিন্তু আগেও ছিলো।
শনিবার (৮ মার্চ) রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে নারীমুক্তির আকাঙ্ক্ষা : গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব আলোচনা করা হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও নারী সংহতির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে নারী সংহতি।
আলোচনায় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সীমা আক্তার বলেন, জুলাই আন্দোলনে ছেলেদের পাশাপাশি আমরা আন্দোলন করেছি। রোকেয়া হল থেকে আমরা নারীদের নিয়ে মিছিল বের করেছি। ছাত্রলীগ নেত্রীদের বের করে দিয়েছি। কিন্তু আমরা এখন রাস্তায় বের হলে মবের শিকার হই। নারীদের এখনও জুলাই শেষ হয়নি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. আনু মোহাম্মদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপর যে অভিযোগ উঠেছে, তারা এখন চুপচাপ আছে কিছু বলছে না। সরব ভূমিকা পালন করছে না। এর ধারাবাহিক কিন্তু আগেও ছিল। ঘাড়ের ওপর বসে ছিল, এমন একটা সরকারের পতন হয়েছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশের একটা স্বপ্ন এসেছে। কিন্তু সরকারি পর্যায়ের কোনো ভূমিকা আমরা দেখিনি।
তিনি বলেন, আমরা যদি ভাবি, এখন যা হচ্ছে তা পতিত সরকারের লোকজন করছে, চক্রান্ত করছে। তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যখন বড় আকারে কিছু ঘটতো তখন তারা বলতো, বিএনপি-জামায়াত করেছে। আমরা তখন বলেছি, বিএনপি-জামায়াত করলে তুমি সরকারে আছো কি করতে। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যও প্রযোজ্য। আমি মনে করি, আমাদের সমাজে নারীর সঙ্গে যা ঘটছে তা নতুন না। আগে থেকেই ঘটছে। কিন্তু রাষ্ট্রকে এটার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি।
সাবেক অধ্যাপক বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। বিভিন্নজন তাদের শক্তির প্রকাশ ঘটানোর চেষ্টা করছে। এখন তৌহিদি-জনতা বলে যারা আসেন, তাদের মধ্যে কতজন তৌহিদি, কয়জন গোয়েন্দা সংস্থা, কয়জন অন্য লোক আসেন তা তদন্ত করার দায়িত্ব সরকারের।
তিনি বলেন, মেয়ে দেখলেই যাদের মধ্যে ধর্ষণের মানসিকতা তৈরি হয়। কেন তারা এমনভাবে তৈরি হয়, তার প্রধান দায় হচ্ছে বাবা-মার। ছোটবেলা থেকে ছেলেদের কর্তৃত্ববাদী তৈরি করা হয়। তারা ছেলে-মেয়ে বড় করার সময়ই বৈষম্য তৈরি করেন।
সঙ্গীতশিল্পী ও গীতিকার কাজী কৃষ্ণকলি ইসলাম বলেন, আমি রাস্তার মেয়ে। এমন কোনো আন্দোলন নেই, যেখানে আমি থাকিনি। সর্বপ্রথম পুলিশের বাড়ি খেয়েছি মনে হয় ১৬-১৭ বছর বয়সে। গত ৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী শব্দটা এখন খোলো পর্যায়ে গিয়েছে। যেখানে বৈষম্যের কোনো ঘাটতি নেই।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডির) সহ-সভাপতি তানিয়া রব বলেন, আজকের নারী দিবস বটে। কিন্তু, এখন আমাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেন চিৎকার করতে হবে? আসলে নারীদের জন্য আমাদের নারীদেরই পাশে থাকতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা বলেন, গত ২২ বছর ধরে কাজ করছি। কিন্তু এখন ৪১ বছর বয়সে এসে আমার মনে হয়, আমি ধর্ষণ হয়ে যেতে পারি। এটার সমাধান কখনও রাষ্ট্র দেবে না। রাষ্ট্রের কাছ থেকে আদায় করে নিতে হবে।
আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন, সংস্কৃতিকর্মী ঋতু সাত্তার, শৈশবের প্রতিষ্ঠাতা ফারহানা মান্নান, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার পরিচালক সীমা দাস সীমু প্রমুখ।