দেশে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া করোনার টিকাদান কর্মসূচিতে টিকা নিয়েছেন ২০ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ জন। তাদের মধ্যে ৬৭৮ জনের সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে ছিল সামান্য জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা ও দুর্বলতা। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, টিকা নেওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এমন তথ্য নেই।
এই টিকার তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘যে কোনও টিকা নিলেই জ্বর, শরীর ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা দেখা দেয়। এগুলো সাময়িক। দুই থেকে তিনদিন থাকবে। ভয়ের কারণ নেই। সাময়িক এ অসুবিধাতে প্যারাসিটামল তিনবেলা করে দুই-তিন দিন খেলেই হবে। সঙ্গে স্বাভাবিক খাবার, পুষ্টিকর খাবার, গরম পানিতে গোসল এবং বেশি করে পানি খেতে হবে। তবে এ সময়ের মধ্যে যদি লক্ষণগুলো না কমে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
গণমাধ্যমকর্মী পিয়াস তালুকদার টিকা নেন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। সেদিন রাত থেকেই তার জ্বর ও শরীরে ব্যথা দেখা দেয়। দুদিন পর শুরু হয় ডায়রিয়া। জ্বর সর্বোচ্চ ছিল ১০১ ডিগ্রি। ডায়রিয়া ছিল পাঁচ দিন। ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘আজ সকাল থেকে একটু ভালো লাগছে, ডায়রিয়া কমেছে। এতদিন দুর্বল ছিলাম।’
গণমাধ্যমকর্মী সঞ্চিতা সীতু জানালেন, টিকা নেওয়ার পর জ্বর না হলেও যে হাতে টিকা নিয়েছেন সে হাতে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল।
একই কথা বলছেন মাহবুবা রহমানও। তিনি বলেন, টিকা নেওয়ার পর তার জ্বর ও শরীর ব্যথা হয়। সেটা কমলেও দুর্বলতা রয়ে গেছে।
তবে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এগুলো সবই সাময়িক রিঅ্যাকশন। ভয়ের কিছু নেই।
টিকা গ্রহণকারীরা আরও জানালেন, টিকা নেওয়ার পর কেবল আধাঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এরপর কী কী করতে হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা নেই। বেশি পানি পান, ফল-সবজিসহ পুষ্টিকর খাবার সংক্রান্ত উপদেশগুলো টিকাদান কেন্দ্র থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে না। এগুলো বলা হলে সাধারণ মানুষের ভয় কমতো।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, টিকা নেওয়ার পর হালকা গা ব্যথা, সামান্য জ্বর, চুলকানি, টিকা দেওয়ার স্থান ফুলে ওঠা, ঠাণ্ডা লাগা, বমি ভাব, মাথাব্যথা বা ক্লান্তিবোধ করার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের শরীরে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
পেট ব্যথা, অতিরিক্ত ঘাম, মাথা ঘোরা, শরীরে ফুসকুড়ি ওঠার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে এক শতাংশের মধ্যে। মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে যা ঘটতে পারে তা হলো শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া কিংবা মারাত্মক জ্বর।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার খুবই কম জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা বিতরণ বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, ‘পরীক্ষামূলক প্রয়োগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার দুই থেকে তিন শতাংশের মতো দেখা গেছে। তবে যেকোনও টিকার ক্ষেত্রেই মাইল্ড থেকে মডারেট বা সিভিয়ার সাইড এফেক্ট হতে পারে। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এটাকে আমরা বলি, আফটার ইফেক্ট ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে শিশু ও বড়দের যে টিকা দেওয়া হয় সেখানে এনাফাইলেক্সিস বলে একটা কথা রয়েছে। এটি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া। তবে এর বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। টিকাদান কেন্দ্রে যারা থাকবেন, তাদের এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাতে হবে।’
টিকা নেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মানেই তার শরীরে টিকা কাজ করছে, এমনটা অনেকেই বলে থাকেন। এর সত্যতা কতটুকু জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘টিকা নেওয়ার পর শরীরে এক ধরনের ইমিউনোলজিক্যাল পরিবর্তন হয়। এর কারণে কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, কারও নাও হতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না দেখা দিলে টিকা কাজ করছে না, বিষয়টি এরকম নয়।
তিনি বলেন, আমরাতো প্রায় ২০ লাখ টিকা দিয়ে দিলাম। মারাত্মক কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বিশ্বের আরও অনেক দেশেই দেওয়া হচ্ছে। কোথাও মারাত্মক কিছু ঘটছে না।’ যোগ করেন ডা. আলমগীর।
টিকা নেবার পর গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনও অভিযোগও আসেনি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, আপনারা যদি গুরুতর জটিলতা তৈরি হয়েছে এমন খবর পান, তা হলে আমাদের জানাবেন। কেউ গুরুতর অসুস্থ বোধ করলে তাকে টিকাকার্ডে দেওয়া চিকিৎসকের নম্বরে যোগাযোগ করতেও অনুরোধ করেন তিনি।