ইনভেস্টমেন্ট সামিট ঘিরে বড় বিনিয়োগের নজর চীনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে এপ্রিলে ঢাকায় চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন করবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনে স্থবির বিনিয়োগে গতি আসবে বলে মনে করছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। তিনি বলেন, সম্মেলনে পাঁচটি খাতে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উৎপাদনমুখী শিল্পে বিনিয়োগ করতে যোগাযোগ করছেন চীনের উদ্যোক্তারা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে দেশটির বিনিয়োগের গতি আরও বাড়বে।

রোববার (২৩ মার্চ) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে “বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫” উপলক্ষ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও বিডার ব্যবসায়িক উন্নয়ন প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি উপস্থিত ছিলেন।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অংশ নেবেন। ইতোমধ্যে ৫০ দেশের ৫৫০ জন্য বিদেশি ব্যবসায়ী সম্মেলনে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছেন। বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে যারা আসছেন তাদের বড় অংশই চীনের। চীন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সিঙ্গাপুর ও জাপানের উদ্যোক্তারা অংশ নেবেন।

সম্মেলনে বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) বৈঠক ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনার পর্ব রয়েছে। সম্মেলনে বিএনপি, জামাত ও এনসিপির মতো রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেবে। বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পাবেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ থাকবে।

তিনি বলেন, আগামী ৭ থেকে ৮ এপ্রিল দেশ-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিনিয়োগের স্থান ঘুরে দেখবেন। আর ৯ থেকে ১০ এপ্রিল ঢাকায় মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। এবার সম্মেলনে বিনিয়োগে বড় সম্ভাবনা দেখছেন নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতকে ঘিরে। এই খাতে চীনের বিনিয়োগকারীরা বেশ আগ্রহী আছেন। এছাড়াও অ্যাডভ্যান্সড টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস খাতেও উৎপাদনমূখী শিল্প গড়তে চায় চীনা উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে বিকল্প বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নিতে পারে চীনা ব্যবসায়ীরা। এই সুযোগ কাজে লাগাতে দেশটির জন্য দেওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত উন্নয়নের নানা জটিলতা অবসানের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া ডিজিটাল কমার্স (সিটিএনএ ও ইউএনডিপি), টেক্সটাইল (এইচএসবিসি ও বিজিএমইএ), কৃষি ও কৃষি-প্রক্রিয়াজাতকরণ (ডাচদূতাবাস ও এলসিপি), এবং স্বাস্থ্যসেবা (ইন্সপিরা, ইবিএল ও সাজিদা ফাউন্ডেশন) অগ্রাধিকার দিয়ে এসব বিষয়ের ওপর আলোচনা হবে। এছাড়া, বিনিয়োগকারীদের জন্য ম্যাচমেকিং সেশন এবং সেরা বিনিয়োগ চর্চা নিয়ে রাউন্ড-টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

এবারের সামিটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরা, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংস্কার প্রদর্শন করা এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সংযোগ তৈরি করা।

সামিটে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট ব্যক্তিত্বরা অংশ নেবেন। এর মধ্যে রয়েছেন জারা গ্রুপের সিইও অস্কার গার্সিয়ামেসেইরাস, ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলাইয়েম, ব্রিটিশ ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন, স্যামসাং সিঅ্যান্ডটির ভাইস প্রেসিডেন্ট কিয়ংসু লি, গিওর্দানোর সিইও জুনসিওক হান, এক্সেলারেট এনার্জির প্রেসিডেন্ট স্টিভেন কোবোস, এশিয়া-প্যাসিফিকঅঞ্চলের উবারের পাবলিক পলিসি প্রধান মাইক অর্গিল এবং মেটার পাবলিক পলিসি পরিচালক সারিম আজিজ। এছাড়াও, বিক্যাপিটাল, গবি, কনজাংশন, মারুবেনি এবং জিএফআর এর মতো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানগুলো স্টার্ট-আপ বিনিয়োগ ও ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে কাজ করবে।

সামিটে অংশ হিসেবে, ৭ এপ্রিল দক্ষিণ কোরিয়ার ২৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রাম, মিরসরাই ও কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শন করবেন। একই দিনে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্টার্ট-আপ সংযোগ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। ৮ এপ্রিল বিনিয়োগকারীরা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত জাপানিজদের বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন। দিন শেষে একটি বিশেষ নেটওয়ার্কিং অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী এখনও বাংলাদেশের প্রকৃত বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন নন। এই সামিটের মাধ্যমে আমরা তাদের বাংলাদেশের সম্ভাবনা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগবান্ধব নীতি এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত করতে চাই। তিনি বলেন, এই সম্মেলনে বিনিয়োগ নিয়ে বেশকিছু এমওইউ সই করার পরিকল্পনা আছে।