আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রায় ৮০ দিন অবরুদ্ধ রাখার পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যৎসামান্য ত্রাণ প্রবেশ করতে দিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। উপত্যকায় বসবাসকারী ১৯ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির জন্য সোমবার মাত্র ৯টি ত্রাণবাহী ট্রাককে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম আর্মি রেডিওকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইডিএফের সরকারি কার্যক্রম সমন্বয় বিভাগের প্রধান ঘাসান এলিয়ান। আর্মি রেডিওকে তিনি বলেছেন, “আজ সোমবার গাজায় শিশুখাদ্য ও ত্রাণসামগ্রীবাহী ৯টি ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। গাজায় প্রবেশের আগে আমরা গাড়িগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করেছি।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, ত্রাণবাহী এসব ট্রাক প্রথমে গাজার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুদামে যাবে। সেখানে মালপত্র খালাস হওয়ার পর জাতিসংঘ ও রেডক্রসের তত্ত্বাবধানে এগুলো বিতরণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, স্বাভাবিক শান্তির সময়েই দারিদ্র ও বেকারত্ব কবলিত গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির এক তৃতীয়াংশ সরাসরি ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর ত্রানের ওপর নির্ভরতা আরও বেড়েছে গাজার বাসিন্দাদের।
অন্যদিকে ইসরায়েলও এই ত্রাণ নিয়ে রাজনীতি করছে অভিযানের শুরু থেকে। গাজায় ত্রানবাহী ট্রাকের প্রবেশ একেবারেই অনিয়মিত করেছে ইসরায়েল। এ প্রসঙ্গে তেল আবিবের যুক্তি, যদি গাজায় ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশ করতে দেওয়া হয়, তাহলে তা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের হাতে পড়বে এবং হামাস আরও শক্তিশালী হবে।
এদিকে খাদ্য ও ত্রাণের অভাবে হাহাকার পরিস্থিতি চলছে গাজায়। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর গোলার আঘাতে গাজায় যত মৃত্যু হয়েছে, তার তুলনায় খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসার অভাবে সেখানে মৃতের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরুর পর গাজায় লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদের অর্ধেক নিহত হয়েছেন গোলার আঘাতে, বাকি অর্থে খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসার অভাবে।
আগের দিন রোববার অবশ্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে গাজার বর্তমান ক্ষুধা পরিস্থিতি নিবারণে জরুরি খাদ্য সরবরাহ করা শুরু হবে। কারণ যদি সেখানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি থাকে, সেক্ষেত্রে তা ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের জন্য বাধার সৃষ্টি করবে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। শুক্রবারের অভিযানের পর গত দেড় বছরে উপত্যকায় মোট নিহত ও আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে যথাক্রমে ৫৩ হাজার ১১৯ জন এবং ১ লাখ ২০ হাজার ২১৪ জনে। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
’২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।
হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল।
কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত প্রায় ২ মাসে দিনে গাজায় নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৯৮৫ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ৮ হাজার ১৭৩ জন।
দ্বিতীয় দফা অভিযান শুরুর ১৭ দিন আগে, ১ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিল ইসরায়েল।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি