নিজস্ব প্রতিবেদক
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উপজেলা সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী প্রতিনিধি এ এইচ এম শহীদুল হককে প্রকাশ্যেই জেলে পাঠিয়ে শাস্তি দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২০ মে) বেলা ১২টায় বাউফল গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা। ইউএনওর এমন আচরণে উপস্থিত সকলে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, বাউফল উপজেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে বাউফল গার্লস স্কুলে স্কুল পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল সোমবার। অনুষ্ঠানটিতে ইউএনওকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি সময়মতো দপ্তরে উপস্থিত ছিলেন না বলে অভিযোগ করেন আয়োজক কমিটির সভাপতি ও সাংবাদিক সোহেল।
সাংবাদিক সোহেল জানান, গত বৃহস্পতিবার, শনিবার ও রোববার তিন দফায় তিনি ইউএনও আমিনুল ইসলামের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে আমন্ত্রণ জানাতে চাইলেও ইউএনও অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রতিবারই ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি রোববার সন্ধ্যায় ফোন করলেও ইউএনও ফোন কেটে দেন। শেষ পর্যন্ত সোমবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম সরাসরি ইউএনওকে আমন্ত্রণ জানানোর পর তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। সেখানেই ইউএনও ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিককে তীব্র ভর্ৎসনা ও হুমকি দেন।
সোমবার দুপুরে বিতর্ক প্রতিযোগিতার স্থানে এসে ইউএনও আমিনুল ইসলাম আয়োজক কমিটির সভাপতির কাছে কৈফিয়ত চান, কেন তাকে পূর্বে অবহিত করা হয়নি।
তার প্রশ্নের জবাবে সভাপতি বলেন, আপনাকে একাধিকবার কার্যালয়ে গিয়ে পাইনি। এমনকি আপনাকে তিনদিন বিভিন্ন সময় ফোন করেছি আপনি রিসিভ করেননি। এতে হঠাৎ করে ইউএনও উত্তেজিত হন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, আপনারা একটা এ্যারেজমন্ট করতেছেন ইউএনও জানে না আপনারা কিসের এ্যারেজমেন্ট করতেছেন, আশ্চার্য ব্যাপার। ইউএনওকে অবহিত না করে আপনাকে এ আয়োজন করার এখতিয়ার কে দিয়েছে।
এ সময় সভাপতি সোহেল বলেন, আপনাকে আমন্ত্রণের জন্য আপনার কমপ্লেক্সে তিনদিন যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনাকে পাইনি।
জবাবে ইউএনও বলেন, উপজেলা কমপ্লেক্সে কে গেছে? কমপ্লেক্সে তো কাউয়া বক থাকে। আপনি আমার বাংলোতে গেলেন না কেন? আমার বাংলো একটা অফিস।’
এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল বলেন, আপনার বাংলোতে কাউকে ডুকতে দেওয়া হয় না।
এর জাবাবে ইউএনও বলেন, বাংলোতে যখন এ্যালাউ করবো তখন ডুকবেন। আপনারা প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে মনে করছেন আপনারা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে গেছেন। আমি আপনার ফোন ধরতে বাধ্য না। আপনি আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফোন দিলে আমি ধরবো কেন?’
এ সময় সভাপতি সোহেল বলেন, আপনি ফোনই ধরলেন না, তা হলে ব্যক্তিগত স্বার্থ, নাকি রাষ্ট্রীয় কোন কাজ বুঝলেন কিভাবে? আপনি একজন কৃষকের ফোনও ধরতেও বাধ্য। এরপর ইউএনও আমিনুল আবার বলেন, আমি প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর মালিককে শাস্তিও দিতে পারি।
তখন সভাপতি সোহেল বলেন, ক্ষমতা আছে আপনি দেন শাস্তি।
এসময় ইউএনও খবরপত্রের সাংবাদিক এইচ বাবলুকে তার পিয়ন দিয়ে ভয়ভীতিও দেখায়। ওই সাংবাদিককে দেখা করে সরি বলতে চাপ প্রয়োগ করেন ইউএনওর গাড়ি চালক।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামকে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেনি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, আমার কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য এখনও আসেনি। তথ্য পেলে মন্তব্য করতে পারবো।