নিজস্ব প্রতিবেদক
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন এক সময় শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে এই জনপদের কৃষকরা আজও উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। প্রতিদিন এখান থেকে লাখ লাখ টাকার সবজি সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অথচ পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা, শুধুমাত্র নাজুক যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের রহমত উল্যাহ মার্কেট থেকে চরক্লার্ক সিডিএসপি ভবন পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা দুই দশকেও পাকাকরণ হয়নি। রাস্তা সংস্কারের অভাবে শহর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চরলক্ষ্মী ও পশ্চিম চর উড়িয়া গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষকে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমে কাঁচা সড়কটি চলাচলের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়ে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, গর্ভবতী নারী, রোগী কিংবা সাধারণ যাত্রী সবাইকে নিত্যদিন চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এমনকি হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও হাসপাতালে পৌঁছাতে সময়মতো যানবাহন মেলে না।
প্রতিদিন মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন থেকে বিপুল পরিমাণ শসা, শিম, বেগুন, মরিচ, কুমড়া, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। কিন্তু কাঁচা রাস্তার কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায় দ্বিগুণেরও বেশি। এতে করে উৎপাদন খরচ উঠলেও মুনাফা থাকে না বললেই চলে। ফলে ফসল ফলিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
রিকশাচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সড়ক খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টি হলে রাস্তায় বের হওয়া যায় না। প্রায় রিকশা নষ্ট হয়ে যায়। যা ইনকাম করি তা গ্যারেজে দিতে হয়। আমাদের মা বোন অসুস্থ হলে তাদের হাসপাতালে নেওয়া যেন যুদ্ধ করার মতো। আমরা অবহেলিত জনপদের বাসিন্দা। সরকার যদি আমাদের দিকে নজর দেয় তাহলে রাস্তাটা নিয়ে আমাদের দুঃখ লাঘব হয়।
স্থানীয় কৃষক রহমত উল্যাহ বলেন, আমাদের প্রধান কাজ কৃষি। আমরা সারাদেশে সবজি প্রেরণ করি। আমাদের সবজি দেশের বাইরেও যায়। রাস্তাটা যদি পাকা হইতো, আমাগো সবজি বেশি দামে বিক্রি হইতো। এখন ট্রাকে তুলতেই বেশি খরচ হয়ে যায়। পাইকাররা কম দাম দিয়ে নিয়ে যায়। আমরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
মো. সিরাজ উদ্দিন নামের সবজি ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বারবার জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলেও সড়কটি উন্নয়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নির্বাচনের সময় আশ্বাস মিললেও, বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।
বর্ষায় স্কুলে যাওয়া অনেক কষ্টকর হয়। কাদা-মাটি পেরিয়ে যেতে হয়। পাকা রাস্তা না থাকায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। সামান্য বৃষ্টি হলে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, গর্ভবতী নারী, রোগী কিংবা সাধারণ যাত্রী—সবাইকে নিত্যদিন চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান জিয়া বলেন, প্রতিদিন কৃষক রাস্তাটি পাকাকরণ বিষয়ে ইউনিয়ন অফিসে এসে ভিড় করে। তাদের উৎপাদিত সবজি সারাদেশে যাচ্ছে কিন্তু তারা অবহেলিত। যদি যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হয় তাহলে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। দেশ কৃষিতে এগিয়ে যাবে। সুবর্ণচরের মতো একটি কৃষিনির্ভর জনপদে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হলে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। মোহাম্মদপুরের মানুষ উন্নয়নের চাকা থেকে ছিটকে পড়েছে, তাদের জীবনে উন্নয়নের আলো পৌঁছাতে হলে অবিলম্বে সড়কটি পাকাকরণসহ সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।