নিজস্ব প্রতিবেদক
নড়াইল শহরের চিত্রা নদীর পাড়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জমিদার আমলের ঐতিহাসিক বাঁধাঘাট ও একটি পাথরের মন্দির। বহু বছরের ইতিহাস আর স্থাপত্য নিদর্শনের বাহক হয়ে আজও টিকে আছে স্থাপনাগুলো। তবে অবহেলা ও অযত্নে জমিদারদের অধিকাংশ স্থাপনাই হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রাচীন হলেও স্থাপনাগুলো এখনও দেখতে নতুনের মতো। প্রতিদিন জেলার ভেতর-বাইরের অনেকে আসেন এগুলো দেখতে।
চিত্রার পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা বাঁধাঘাটটি সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। টাইলস ও রেলিং দিয়ে ঘাট চত্বর সাজানো হয়েছে। মন্দিরটিও রয়েছে ভালো অবস্থায়। নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রাঙ্গণে রয়েছে জমিদার আমলের গ্যালারি ভবন। হাটবাড়িয়ায় জমিদার বাড়িতে একটি মন্দির, সান বাঁধানো একটি পুকুরঘাট এবং সেখানে একটি পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে।
জানা যায়, ১৭৯১ সালে নড়াইলে জমিদারি প্রথা শুরু করেন জমিদার কালিশংকর রায়। পরে তার দুই ছেলে রাম নারায়ণ রায় ও জয় নারায়ণ রায়ের মধ্যে জমিদারি ভাগ হয়। বড় ছেলে রাম নারায়ণ পেয়েছিলেন নড়াইল শহরের জমিদার বাড়ি, ছোট ছেলে জয় নারায়ণ পেয়েছিলেন হাটবাড়িয়ার জমিদারি এলাকা।
১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর জমিদার পরিবার কলকাতায় চলে যায়। ১৯৫০ ও ১৯৫২ সালের দিকে কয়েকজন সদস্য ফেরত এলেও স্থায়ী হননি। রেখে যান জমিদার বাড়ি, নাট্যমঞ্চ, কাছারিঘর, পুকুর, দীঘি, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
চিত্রার পাড়ে বাঁধা ঘাট দেখতে আসা সাতঘরিয়া গ্রামের আবুল বিশ্বাস বলেন, এক সময়ে জমিদারের রেখে যাওয়া অনেক স্মৃতিচিহ্ন নড়াইলে ছিল। এখন দেখার মতো তেমন কিছু নাই। থাকার মধ্যে বাঁধাঘাট, পাধুরে মন্দির ও হাটবাড়িয়ায় একটি মন্দির ও সান বাঁধনো পুকুরঘাট রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন এসব স্থাপনা দেখতে দূর দূরন্ত থেকে দর্শনার্থী আসেন।
হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি, সান বাঁধানো পুকুরঘাট আর শতবর্ষী কালি মন্দির সব মিলিয়ে এক ঐতিহাসিক নিদর্শন হয়ে আছে এই স্থানটি। নানা বয়সের মানুষ প্রতিদিনই ছুটে আসেন পুরোনো দিনের স্মৃতি আর সৌন্দর্য দেখতে।
তেমনি একজন শিক্ষার্থী সোহাগ। জায়গাটিতে ঘুরতে এসে বললেন, হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি দেখতে এসেছি। খুব ভালো মনোরম পরিবেশ। দেখতে পেলাম এখানে জমিদারদের একটি মন্দির রয়েছে। আর এই পুকুরটা আছে। সিঁড়ি বাঁধানো ঘাট। তবে মন্দির ও ঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রশাসন যদি এই ঘাট মেরামতের কাজ করত তাহলে পর্যটকের আরও ভিড় হত।
এ মন্দিরটি শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, জমিদার আমলের ইতিহাস বহন করে চলেছে। ৩ বছর ধরে এর দেখভাল করে আসছে স্থানীয় একটি কমিটি।
কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুনার ঘোষ ঘোষ বলেন, নড়াইলে ১৩৫ বছর ধরে জমিদারদের এই মন্দিরটি নড়াইলের স্মৃতি বয়ে আসছে। দূর-দূরান্ত থেকে এই মন্দিরে ভক্তরা পূজা দিতে আসেন। হিন্দু-মুসলিম সকলে এই মন্দিরের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। তখনকার জমিদার রতন কুমার রায় এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত করেন। মন্দিরটি সম্পূর্ণ পাথর দ্বারা নির্মিত। জরিদারদের স্মৃতি চিহ্ন স্বরুপ এই মন্দিরটি এখন ও স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে।
নড়াইলে জমিদার আমলের স্থাপনা রক্ষায় এগিয়ে এসেছে জেলা প্রশাসন। সংস্কার করা হয়েছে শতবর্ষী মন্দির ও বাঁধাঘাট।
নড়াইল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লিংকন বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, নড়াইলে এক সময়ে জমিদার প্রথা ছিল। তৎকালীন জমিদারের রেখে যাওয়া ভবনগুলো এখনও স্মৃতি চিহ্ন হিসাবে দেখা যায়। হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি যে মন্দিরটি রয়েছে এটি বহু বছরের পুরোনো। সেখানে আমরা সংস্কার করেছি। আরও কিছু প্রকল্প এনে মন্দিরটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাঁধা ঘাটের ওপর পানি পড়ার অভিযোগ এসেছিল। সেটি ও আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংস্কার করেছি। চিত্রার পাড়ে অবস্থিত এই বাঁধা ঘাট নদী ভাঙনে যেন বিলীন না হয় সেই জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া পাথুরে মন্দিরসহ জমিদারদের রেখা যাওয়া স্থাপনা সংরক্ষণে জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছেন।