আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে সামরিক আইন জারির ব্যর্থ চেষ্টার মামলায় বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর সিউলের একটি আটককেন্দ্রে বন্দি রাখা হয়েছে তাকে।
রাজধানী সিউলের একটি আদালত মামলার আলামত ধ্বংস করতে পারেন আশঙ্কায় সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ইউন সুক-ইওলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
৬৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিকে বর্তমানে সিউলের আটককেন্দ্রে রাখা হয়েছে। এর আগেও চলতি বছরের শুরুর দিকে একই আটককেন্দ্রে ৫২ দিন ছিলেন তিনি। চার মাস আগে কৌশলগত দিক বিবেচনায় মুক্তি দেওয়া হয়েছিল তাকে।
গত বছরের ৩ ডিসেম্বর দেশটির আইনপ্রণেতারা প্রেসিডেন্ট সামরিক আইন জারির ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সংসদে সশস্ত্র সৈন্য পাঠিয়ে বেসামরিক সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করেন ইউন। এই ঘটনার জেরে দেশটিতে ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটির পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তার করে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ছিল এটি। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য প্রেসিডেন্সিয়াল নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করেন তিনি।
গত মার্চে আইনি প্রক্রিয়া বিবেচনায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। এই সঙ্কটের সমাধানে গত জুনে দেশটিতে আগাম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ক্ষমতায় এসে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং বিশেষ তদন্ত আইনের অনুমোদন দেন। এই আইনে ইউনের সামরিক আইন জারির চেষ্টা ও তার প্রশাসন এবং স্ত্রীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধমূলক অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।
বুধবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির শুনানিতে ইউনের আইনজীবীরা প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারে আদালতের নির্দেশ অযৌক্তিক বলে আখ্যা দেন। তারা বলেন, ইউন এখন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট এবং তার হাতে আর কোনও ক্ষমতা নেই।
সাত ঘণ্টাব্যাপী শুনানিতে দেশটির সাবেক এই প্রেসিডেন্টও বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, আমি এখন একাই লড়াই করছি। বিশেষ কৌঁসুলি এখন আমার আইনজীবীদের বিরুদ্ধেও লড়ছেন বলে অভিযোগ করেন ইউন। তিনি বলেন, এক এক করে সবাই সরে যাচ্ছেন এবং হয়তো আমাকে একাই এই মামলা লড়তে হবে।
এদিকে, ইউনের আইনজীবীরা বলেছেন, বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর সাবেক প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার দশম শুনানিতে অংশ নেবেন না। স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা জানিয়ে তার অনুপস্থিতির কারণ লিখিতভাবে আদালতকে জানানো হয়েছে।
তবে ইউনের আইনজীবীরা শুনানিতে তার পক্ষে অংশগ্রহণ করছেন বলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ জানিয়েছে। ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ইউনের সর্বোচ্চ সাজা আজীবন কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা।