আন্তর্জাতিক ডেস্ক
তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হলে ইরান পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন। তবে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য জানাননি তিনি।
গত সপ্তাহে ফরাসি এক কূটনৈতিক সূত্র ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিল, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো কোনও পারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালে তথাকথিত ‘স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম’ ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে।
‘স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম’ এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির আওতায় ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা যায়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে শিথিলতার শর্তে নিষেধাজ্ঞা থেকে রেহাই পায় ইরান।
সোমবার তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাঘায়ি বলেছেন, ‘‘স্ন্যাপব্যাক ব্যবস্থা ব্যবহারের হুমকি দেওয়ার কোনও আইনি কিংবা রাজনৈতিক ভিত্তি নেই। ইরান এর যথাযথ ও সমুচিত জবাব দেবে।’’ তবে ইরান কী ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ নেবে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য জানাননি তিনি।
২০১৫ সালে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে ইরানের বহুল আলোচিত জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের এক চুক্তি স্বাক্ষর স্বাক্ষর হয়। এতে বলা হয়, যদি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী পক্ষগুলো ইরানের ‘গুরুতর চুক্তি লঙ্ঘনের’ অভিযোগের সমাধানে ব্যর্থ হয়, তাহলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের যে কেউ ‘স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম’ ফেরাতে পারবে।
বাঘায়ি বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো বারবার এই ব্যবস্থাকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। জেসিপিওএর শর্ত অনুযায়ী নিজেদের দায়িত্ব পালনে গুরুতর ব্যর্থতা দেখিয়েছে তারা।
‘‘তারা জেসিপিওএর আওতায় নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এই ব্যবস্থার দিকে যাওয়ার কোনও আইনগত বা নৈতিক ভিত্তি তাদের নেই।’’
পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করার অভিযোগ করেছে। তবে তেহরান বরাবরের মতো এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘দুর্বল’ আখ্যা দিয়ে ওয়াশিংটনকে প্রত্যাহার করে নেন।
গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর আবারও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা শুরু করেন ট্রাম্প। ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংসের লক্ষ্যে গত মাসে তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনার পাশাপাশি সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইসরায়েল।
ইরান- ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রও সরাসরি তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমা ব্যবহার করে হামলা চালায়। পরে ট্রাম্প ও অন্যান্যদের মধ্যস্থতায় ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির পর তেহরানকে নতুন চুক্তির জন্য পারমাণবিক আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ও ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে কোনও বৈঠক হবে কি না, জানতে চাইলে বাঘায়ি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের পারমাণবিক আলোচনা পুনরায় শুরুর বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও তারিখ কিংবা স্থান নির্ধারিত হয়নি।
সূত্র: রয়টার্স।