চুক্তির মেয়াদ শেষ তিন বছর হলো। এখন প্রকল্পের সমাপ্তি প্রতিবেদন তৈরির কাজও চলছে। তবু স্মার্টকার্ড উৎপাদনকারী ফরাসি প্রতিষ্ঠান অবার্থার টেকনোলজিসের কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, এটি একটি বিরাট ক্ষতি।
অবার্থারের খামখেয়ালির কারণেই স্মার্টকার্ড উৎপাদন, বিতরণে এত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার আইডিইএ (আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস) প্রকল্পটি হাতে নেয়।
এরমধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা ১০ বছর মেয়াদে ঋণ দেয়।
বিশ্বব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কাউকে দিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে কয়েক বছর সময় লেগে যায়।
অবশেষে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি, সেই সময়কার ৯ কোটি (৯০ মিলিয়ন) নাগরিকের (ভোটার) স্মার্টকার্ড সরবরাহে অবার্থারের সঙ্গে ৭৯৬ কোটি ২৬ লাখ টাকার চুক্তি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শর্ত অনুসারে ১৮ মাসের মধ্যে সবগুলো স্মার্টকার্ড তৈরি করে দেওয়ার কথা থাকলেও ৩০ মাসেও পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে চুক্তির মেয়াদ করা হয় ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। বেশ কয়েকবার তাগাদা, জরিমানার পর এ পর্যন্ত মোট কার্ড দিয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখের মতো। এখনো ১ কোটি ৭০ লাখের মতো ফাঁকা স্মার্টকার্ড দেয়নি।
এ বিষয়ে এনআইডি অনুবিভাগের তৎকালীন মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, চুক্তির পর থেকেই কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেনি কোম্পানিটি। বরং বারবার নানা অজুহাতে সময় নিয়েছে। ফলে ঝুলে গেছে পুরো প্রক্রিয়াটি।
পরে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করার দায়ে অবার্থারের কাছ থেকে ৩৫০ কোটি টাকার জরিমানাও আদায় করে ইসি। এরপর দূতাবাসের মাধ্যমেও নানা তদবির শুরু করে ফরাসি কোম্পানিটি। অবশেষে অবশিষ্ট কার্ডগুলো দেওয়ার শর্তে ২২০ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য সমঝোতায় যায় ইসি। সেই সমঝোতারও পরেও দুই বছর অতিবাহিত হয়েছে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ঝামেলা হয়েছে অবার্থারের সহযোগী দেশীয় প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটির সঙ্গে। যাদের কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে ফাঁকা স্মার্টকার্ডে নাগরিকের তথ্য ইনপুট দিয়ে বিতরণ করা হতো।
অবার্থারের সঙ্গে টাইগার আইটির সম্পর্ক ভালো নয়। পাওনা পরিশোধ না করার অভিযোগে অবার্থারের বিরুদ্ধে মামলাও করে টাইগার আইটি। আর এই মামলা জটিলতার কারণে নির্বাচন কমিশন এখনো অবার্থারের কাছ থেকে দেড় কোটি ফাঁকা স্মার্টকার্ড নিতে পারেনি।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইসির এক সমন্বয় সভায় এ নিয়ে আবারো আলোচনা হয়। সভার সভাপতি হিসেবে ইসি সচিব প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে চান। এনআইডি অনুবিভাগ থেকে জানানো হয়, প্রকল্পটি চলতি বছর শেষ সমাপ্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে অবার্থারের সঙ্গে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তাগাদা দেওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে আইডিইএ প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল কাদের জানান, আইডিইএ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে অনুমোদনের পর গত ১১ ফেব্রুয়ারি সরকারি আদেশ জারি হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
‘অবার্থারের কাছ থেকে ৯ কোটি কার্ড পাওয়ার কথা থাকলেও আমরা ৭ কোটির কিছু বেশি কার্ড পেয়েছিলাম। আরও দুই কোটি কার্ড আমাদের হাতে নেই। ২০২৫ সালের মধ্যে নিবন্ধিত সব নাগরিককে স্মার্টকার্ড দেওয়ার জন্য আমরা সব পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি। ’
জানা যায়, বর্তমানে ইসির সার্ভারে সার্ভারে ১১ কোটির মতো ভোটারের তথ্য আছে। ২০২৫ সাল নাগাদ আরো প্রায় চার কোটির মতো ভোটার যুক্ত হবে। সেই সঙ্গে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ভোটারদেরও স্মার্টকার্ড দেবে ইসি। সেই হিসেবে এ সময়ের মধ্যে আরো প্রায় ১০ কোটির মতো স্মার্টকার্ড তৈরি ও বিতরণ করতে হবে।
আইডিইএ দ্বিতীয় প্রকল্প শেষ হলে সরকারের কাছে এটি রাজস্বখাতে নেওয়ার জন্যও প্রস্তাব রয়েছে ইসির।