নিজস্ব প্রতিনিধি:
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, অযৌক্তিকভাবে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। তেলের দাম বাড়লে পণ্যের উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাবে, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। তার ওপর তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) জাপার বনানী কার্যালয়ে এক যোগদান অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. নূরুন্নবী মৃধা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের হাতে ফুল দিয়ে যোগদান করেন।
সরকার ব্যবসায়িক দৃষ্টি দিয়ে দেশ পরিচালনা করলে মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে। সেবার মনোভাব নিয়ে দেশ পরিচালনা করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে এই অজুহাতে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু, করোনাকালে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক কম ছিলো, তখন তো তেলের দাম কমানো হয়নি। তখন যে পরিমাণ টাকা লাভ হয়েছে সেই টাকা কোথায় গেলো। ভর্তুকি দিয়ে হলেও তেলের দাম সহনীয় রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আইনের শাসন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯টি দেশের মধ্যে ১২৪তম। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূচকে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। এটা খুবই দুঃখজনক।
জিএম কাদের বলেন, ২১ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকে অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছিলো। আবার ১৩ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপির অবস্থাও অনেক দূর্বল। কিন্তু ৩১ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকে জাতীয় পার্টি এখনো রাজনীতিতে সক্রিয় আছে। কারণ, জাতীয় পার্টির শেকড় অনেক শক্ত। দেশের মানুষ আবারও জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। তাই, প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষ জাতীয় পার্টির পতাকাতলে যোগ দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, বৈষম্যের প্রতিবাদে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছিলো। তখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের সাথে বৈষম্য করতো। কিন্তু সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা ছেড়ে দেবার পর থেকে দুটি দল দেশের মানুষের সাথে বৈষম্য শুরু করেছে। যত যোগ্যতা সম্পন্নই হোক না কেন, ঘুষ আর দলীয় আনুগত্য না থাকলে চাকরি হয় না। দলীয় পরিচয় না থাকলে ব্যবসা করতে পারো না দেশের মানুষ। দেশের মানুষের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে স্বাধীনতার পরিপন্থী।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, অনেকেই আঁতেল সাজতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে স্বৈরাচার বলেন। কিন্তু, কেন স্বৈরাচার বলেন তার জবাব দিতে পারেন না তারা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে জাতীয় পার্টি হচ্ছে সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক শক্তি। তাই বিএনপি ও আওয়ামী লীগ বারবার জাতীয় পার্টিকে ধংস করতে অপচেষ্টা করেও সফল হয়নি। বিএনপির আপোষহীন নেত্রী মুচলেকা দিয়ে চিকিৎসার জন্য জেলখানার বাইরে আছেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে বারবার সরকারের কাছে আবেদন করছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জেলখানায় থাকা অবস্থায় ভয়াবহ জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখন চিকিৎসকরা জেলখানার বাইরে এরশাদের চিকিৎসার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও তখন চিকিৎসার জন্য দলীয়ভাবে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু, তখন খালেদা জিয়ার সরকার চিকিৎসার জন্য এরশাদকে জেলখানার বাইরে নেওয়ার অনুমতি দেয়নি। ৯১ সালের পর জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে হামলা-মামলা দিয়ে বিএনপি যে অন্যায় করেছিলো, বর্তমানে তার প্রায়শ্চিত্ব করছে বিএনপি। বিএনপির আমলে জাতীয় পার্টির ওপর যে অত্যাচার করা হয়েছিলো, বিএনপি তার কিছুটা স্বাদ পাচ্ছে এখন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এমএ তালহা প্রমুখ। জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক নাটোর জেলা আহ্বায়ক অধ্যাপক আলাউদ্দিন মৃধার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনিরুল ইসলাম মিলন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন খালেদ, আনোয়ার হোসেন তোতা, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এমএ রাজ্জাক খান প্রমুখ।
বিএসডি / আইকে