নিজস্ব প্রতিবেদক:
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকাল সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন। ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যাওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরাও এ সফরে অংশ নেবেন। এবারের সফরে বিনিয়োগ, বাণিজ্য, খাদ্য সহযোগিতা, অভিবাসী শ্রমিকসহ অনেক বিষয় দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া ৮ মার্চ নারী দিবসে ওই দেশের আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিবাসী শ্রমিক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ নিয়ে সবসময় আমরা আলোচনা করি। এবার খাদ্য নিরাপত্তা সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা করতে আমরা আগ্রহী।
আরব আমিরাত তাদের খাদ্যের বেশির ভাগ আমদানি করে থাকে। আমরাও সেখানে খাদ্য রফতানি করতে চাই। বাংলাদেশের সক্ষমতা আগের থেকে অনেক বেশি এবং আমরা এখন বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী গুণগত মানের পণ্য উৎপাদনে সক্ষম। তিনি জানান, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরকালে খাদ্য রফতানির বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তারাও এ ব্যাপারে আগ্রহী। তবে তারা যে বিষয়গুলো নিশ্চিত হতে চায় সেটি হচ্ছে টেকসই জোগান এবং যদি কখনো খাদ্য রফতানি বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ, তবে যেন তাদের আগে থেকে জানানো এবং সময় দেয়া হয়।
বন্দরব্যবস্থাপনা, জ্বালানিসহ আরো কয়েকটি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী দেশটি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, পতেঙ্গা টার্মিনাল এবং বে টার্মিনাল উভয় জায়গায় কাজ করতে আগ্রহী দুবাইয়ের বড় কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সফরকালে তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এ সময় বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বৈত সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে কিছু বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজনে উভয়ে সম্মত হন। তাছাড়া গভীর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা, বর্ধিত বিমান ও সামুদ্রিক সংযোগ, বিশেষ করে দুই দেশের সমুদ্রবন্দরের মধ্যে সরাসরি শিপিং সংযোগ স্থাপন এবং সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখার জন্য সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুর বিষয়ে পারস্পরিক প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় উভয়ে কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, আইসিটি, আইওটি এবং ডিজিটাইজেশনের সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন রূপ অন্বেষণ করতে অংশীদারিত্ব বাড়াতে সম্মত হন।
সবশেষ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমিরাত সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ তিন বছর পর আবারো আমিরাত সফর করতে যাচ্ছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর গতবারের আমিরাত সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বন্দর, শিল্প পার্ক, এলএনজি টার্মিনাল, পাওয়ার প্লান্ট ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন দুবাইয়ের ব্যবসায়ীরা।
বিএসডি/ এফএস