নিজস্ব প্রতিনিধি
সম্প্রতি বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলের বিভিন্ন নেতার নাম উল্লেখ করে ফেসবুকে চরম সমালোচনা শুরু করেছেন। তবে বাক স্বাধীনতার এ ব্যবহারকে আপতত বন্ধ করে দিতে চাইছে বিএনপির হাইকমান্ড।
তাদের মতে, দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর- এমনকি সিনিয়র কোনো নেতার সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো লেখা প্রচার যাবে না। নেতাদের কোনো অনিয়ম বা বিচ্যুতি চোখে পড়লেও সেটি নিয়ে সমালোচনা করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা যাবে না। প্রয়োজনে হাইকমান্ডকে ফোনে অনিয়মের বিষয়ে জানাতে হবে।
বিএনপির বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, দলীয় নেতাদের সমালোচনা বন্ধে তৃণমূল কর্মীদের ফেসবুকসহ অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিগগিরই কিছু নির্দেশনা দেবে বিএনপির হাইকমান্ড।
বিএনপি ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলছে, দেড় বছর ধরে নেতাদের ঘরে বসে থাকা, একাদশ নির্বাচনে পরাজয়, খালেদা জিয়ার মুক্তি আদায় ও আন্দোলন-সংগ্রাম গড়তে ব্যর্থতার সমালোচনায় নানা সময়ে তৃণমূলের সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব, কমিটি মনোনয়ন, পদ বিতরণসহ নানা ইস্যুতে বিভিন্ন সময়ে হাইকমান্ডকে বঞ্চনা শুনতে হচ্ছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে।
আর ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে এসব অনিয়ম, বিচ্যুতি নিয়ে কর্মীদের লেখালিখির কারণে তৃণমূল বিএনপিতে বাড়ছে বিশৃঙ্খলা ও হতাশা। এর ফলে সংগঠিত করা যাচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়া তৃণমূল বিএনপিকে।
এছাড়া খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মির্জা ফখরুলদের মতো নেতাদের নিয়ে নিজ দলীয় কর্মীরা কঠোর সমালোচনা করায় রাজনীতিতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে হাইকমান্ডকে। অনেক ক্ষেত্রে ফেসবুকে দলের বিরুদ্ধে নেতিবাচক লেখালেখির কারণে অবিশ্বাস, অনাস্থা ও হতাশার কারণে দলত্যাগী নেতাদের সংখ্যাও সমানতালে বাড়ছে। তাই দলীয় প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সম্মান রক্ষার পাশাপাশি তৃণমূলে দলত্যাগ আটকাতে ফেসবুকে কর্মীদের নেতিবাচক লেখা বন্ধ রাখতে কঠোর হচ্ছে বিএনপি।
জানা গেছে, কোন কোন বিষয় ফেসবুকে প্রচার করা যাবে না, এ সংক্রান্ত একটি খসড়া তৈরি করে এরই মধ্যে লন্ডনে পাঠানো হয়েছে। তারেক রহমান অনুমোদন দিলেই সেটিকে দলীয় আইন বানিয়ে তৃণমূল কর্মীদের সমালোচনা ঠেকাতে ব্যবহার করা হবে। আর যারা আইন অমান্য করে নেতিবাচক লেখালেখি করবে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে হাইকমান্ড। বেশি বাড়াবাড়ি করলে বহিষ্কারও করা হতে পারে। মোট কথায় দলের সম্মান রক্ষায় কঠোর হতে যা করবার তাই করবে বিএনপি।
ফেসবুক ব্যবহারে দলীয় কর্মীদের সতর্ক করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে এই নয় যে আপনি যাকে-তাকে অপমান করবেন। বিএনপি একটি বড় দল। এটি পরিচালনা করতে গেলে ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। তবে সেটি নিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দোষারোপ করে তো কর্মীরা যাচ্ছেতাই মনোভাব প্রকাশ করতে পারে না। মূল কথা হলো দলের সমালোচনা ও গোপনীয় কোনো কিছু নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে পারবেন না কর্মীরা।
তিনি আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা না করে কোনো অভিযোগ থাকলে সরাসরি হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ শোনার জন্য একটি সেল গঠন করা হবে। সেখানে মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকবে। ফোন করে যে কেউ অভিযোগ করতে পারবে।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবীরা বলেন, বিএনপির নতুন এ আইনের মাধ্যমে তাদের দলের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের কণ্ঠরোধ করতে চায়, যা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী। নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাক স্বাধীনতা না হরণ করতেই তারা এ আইন চালু করছে। এ আইন চালুর মধ্য দিয়ে বিএনপি তাদের দলের মধ্যে গণতন্ত্রকে হত্যা করছে।
বিএসডি/এমএম