খিটখিটে মেজাজ কিংবা অস্বাভাবিক আচরণ, একা একা কথা বলা, বদ্ধমূল ভ্রান্তবিশ্বাস মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির লক্ষণ। সাধারণত ১৫-৪৫ বছরের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা যায়। তাই আপনিও হতে পারেন একজন ভুক্তভোগী। চলুন জেনে নিই, কিভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচর্যা করবেন।
নিজেকে সময় দিন। আপনার শখ কিংবা পছন্দের কাজের জন্য ব্যাস্ততার ফাঁকে সময় বের করে নিন। ক্রসওয়ার্ড পাজল সলভ করতে পারেন, গার্ডেনিং করতে পারেন। পছন্দের খেলাধূলা করতে পারেন কিংবা করতে পারেন ভাষা চর্চা।
নিজের যত্ন নিলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়
নিজের শরীরের যত্ন নিন। নিজের যত্ন নিলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। প্রতিদিন পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবার খান। ধূমপান এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এক্সারসাইজ করুন, এতে ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তা কমবে এবং মন ভালো থাকবে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন, অপর্যাপ্ত ঘুম ডিপ্রেশন বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৬/৭ ঘন্টা ঘুমান।
যাদের ফ্যামলি বন্ডিং এবং সোশ্যাল কানেকশন ভালো থাকে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। নিজের পরিবারকে সময় দিন। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সাথে ভালো সময় কাটান। মন ভালো থাকবে।
অপরকে সাহায্য করুন। এতে মানসিক সন্তুষ্টি পাবেন এবং ভালো লাগবে। তাছাড়া, নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার এটা একটা ভালো মাধ্যম।
ধকল কাটিয়ে উঠতে শিখুন। পছন্দ করুন কিংবা না করুন, স্ট্রেস জীবনেরই একটা অংশ। তাই এর সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। ওয়ান মিনিট স্ট্রেস স্ট্র্যাটেজি, তাই চি, এক্সারসাইজ, হাটা, পোষা প্রাণীর সাথে খেলা করা অথবা জার্নাল রাইটিং আপনার স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে। গবেষণায় দেখা যায় যে, হাসি ইমিউন সিস্টেমকে বুস্ট করে, পেইন কমায়, বডি রিল্যাক্স করে এবং স্ট্রেস কমায়।
মনকে শান্ত রাখুন। অযথা ক্ষেপে কিংবা রেগে যাবেন না। মেডিটেশন করতে পারেন। প্রার্থনা কিংবা মেডিটেশন আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে।
আপনার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আপনি একাডেমিক্যালি, প্রফেশনালি, পারসোনালি কি অর্জন করতে চান তার একটি তালিকা করুন। পাশাপাশি লক্ষ্য বাস্তবায়নে করণীয় ঠিক করে রাখুন। স্বপ্ন দেখুন কিন্তু বাস্তববাদী হোন। আপনার উন্নতির সাথে সাথে অর্জনের অসাধারণ অনুভূতি পাবেন। নিজেকে সবচেয়ে সুখি মনে হবে।
মদপান এবং অন্যান্য ড্রাগ এড়িয়ে চলুন। মাঝেমাঝে মানুষ সেল্ফ মেডিটেশনের জন্য এলকোহল কিংবা ড্রাগ ব্যাবহার করে থাকে। কিন্তু, বাস্তবে এলকোহল কিংবা ড্রাগ শুধু সমস্যাই বাড়ায়। এটা কোনোভাবেই সেল্ফ রিলিফ দিতে পারেনা।
নিজের সমস্যার কথা বিশ্বস্তজনকে জানান। সাহায্য নেওয়া কোনো দুর্বলতা নয়। মনে রাখা উচিৎ যে, পরিচর্যা অনেক কার্যকরী। যারা সঠিক পরিচর্যা পান, তারা সহজেই মানসিক অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্হা ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১৬ শতাংশ এবং শিশু কিশোরদের মধ্যে ১৮ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এই সংখ্যাগুলো কোনো ভালো ফল নিয়ে আসবে না। তাই আসুন, নিজে সুস্থ্য থাকি, অপরকে সুস্থ্য রাখি।
লেখক – মুজতাবা তামিম আল মাহদি
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ