রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফিশারিজ বিভাগের এক শিক্ষকের প্রশ্নপত্র ফাঁসের রেশ না যেতেই এবার আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক সাজেশনের নাম করে চূড়ান্ত পরীক্ষার আগেই এক কোর্সের প্রশ্নপত্র অনলাইন ক্লাসে কিছু ছাত্রের কাছে শেয়ার করেছেন বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন। তিনি ওই কোর্সের একজন প্রশ্নকর্তা এবং পরীক্ষা কমিটির একজন সদস্য।
অভিযোগ উঠেছে, নিয়মিত ক্লাস না করিয়ে নাম মাত্র অনলাইন ক্লাসে অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন নিজের গ্রুপের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভালো নম্বর পাইয়ে দেবার জন্য এফএমএমও ৬৪৫ কোর্সের একটি নমুনা প্রশ্নপত্র গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে শেয়ার করেন। যা চূড়ান্ত পরীক্ষায় আসা প্রশ্নপত্রের সঙ্গে প্রায় হুবহু মিল রয়েছে।
এরইমধ্যে এই পরীক্ষা বাতিল চেয়ে আজ সোমবার দুপুরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন করেছেন একই বিভাগের শিক্ষক ও অনুষদ অধিকর্তা অধ্যাপক ইসতিয়াক হোসাইন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে দেয়া আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ বিভাগে সকাল ১০টা হতে দুপুর ১টা পর্যন্ত এম.এস. ইন ফিশারীজ ম্যানেজমেন্ট সেমিস্টার-২, জুলাই-ডিসেম্বর ২০২০ পরীক্ষার অন্তর্গত কোর্স নং এফএমএমও-৬৪৫ এর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঋগগঙ-৬৪৫ কোর্সের কোর্স শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন বিগত ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ এক অনলাইন ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে টাইপ করা একটি প্রশ্নপত্র শেয়ার করেন, যা ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত ঋগগঙ-৬৪৫ কোর্সের পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রশ্নপত্রের সাথে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ।
অল্পকিছু সমজাতীয় (সিনোনেমাস) শব্দ ব্যাতীত উভয় প্রশ্নপত্রের মধ্যে কোন অমিল নেই, অর্থাৎ অনলাইন ক্লাসে স্ক্রীন শেয়ারের মাধ্যমে প্রদর্শিত প্রশ্নপত্রের উত্তরগুলোই চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য প্রযোজ্য হবে। অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন উক্ত কোর্সের একজন প্রশ্নকর্তা এবং পরীক্ষা কমিটির একজন সদস্য। সর্বোপরি এভাবে ক্লাসে প্রশ্ন শেয়ার করা নৈতিকতা বিবর্জিত, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিপন্থী এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞানের বিকাশকে বাধাপ্রাপ্ত করার অপচেষ্টা বলে আমি মনে করি। এ বিষয়ে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পরীক্ষাটি বাতিল করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী অনুষদ অধিকর্তা অধ্যাপক ইসতিয়াক হোসাইন বলেন, ‘বিভাগের সভাপতির গাফিলতি আছে। নাহ লে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না। এর পেছনে কোনো দূরভিসন্ধিও থাকতে পারে। অভিযোগ খতিয়ে দেখলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মঞ্জুর আলম বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে এখনো আমি অবগত না।’
জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আবেদন প্রসেস করে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের কাছে দেয়া হবে। তারপর নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘প্রথম যে প্রশ্নগুলোর স্ক্রিনশট প্রচার করা হয়েছে, আমি সেগুলো পড়াই না। আর এটি বিগত বছরের প্রশ্নপত্র। শিক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রের ধারণা নিতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে আমি পূর্বের প্রশ্ন থেকে তাদের ধারণা দিয়েছি। পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার সুনাম নষ্টের জন্য এমনটা করা হয়েছে।’