নিজস্ব প্রতিবেদক: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে আবারো স্বাভাবিক গতিতে ফিরতে শুরু করেছে। শিডিউল আর ‘এক্সট্রা ফ্লাইট’ নাম দিয়ে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, চায়নার ক্যান্টন, হংকংসহ ইস্ট এবং ওয়েস্ট মিলিয়ে ১৫টি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এ দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে কর্মরত পাইলট থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসিক বেতন থেকে শতকরা ১৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা এখনো কর্তন করে নেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিমান কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সবার জন্য চিকিৎসা বিলের যে টাকা ক্যাশ কাউন্টার থেকে দেয়া হতো সেটিও গত আট মাস ধরেই বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর গত মার্চ থেকেই দেশী-বিদেশী সব ধরনের এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হযে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিমান ম্যানেজমেন্ট বিমানের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদানুযায়ী বেতনের টাকা থেকে একটি অংশ কর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বেতন কাটা হয়েছে পাইলটদের। এ ছাড়া সর্বনিম্ন যাদের বেতন রয়েছে তাদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ হারে টাকা কর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মঙ্গলবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, করোনা মহামারী শুরুর পর আর্থিক সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ গত এপ্রিল মাস থেকেই আমাদের বেতন থেকে শতকরা ১৫-৫০ শতাংশ টাকা কেটে নেয়া শুরু করে। যা এখনো অব্যাহত আছে। তারা বলেন, বেতন থেকে টাকা কর্তনের পাশাপাশি তাদেরকে চিকিৎসার জন্য ক্যাশ কাউন্টার থেকে স্লিপের মাধ্যমে যে বিল প্রদান করা হতো সেটিও এপ্রিল মাস থেকে বন্ধ। যা বর্তমানে আট মাস পার হলো। চিকিৎসা বিল বন্ধের বিষয়ে তারা বলছেন, ‘এটাতো আমাদের প্রাপ্য’। চিকিৎসা আমাদেরও দরকার আছে? যাক এত দিন সমস্যা ছিল। এখন তো সব দেশের সাথে ফ্লাইট চলাচল আবারো স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এখন আমাদের দিকে তো তাকানোর সময় এসেছে কর্তৃপক্ষের।
এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, এর আগে যত দূর আমরা জানি, আমাদের বিমানের ইউনিয়ন থেকে মানবিক কারণ উল্লেখ করে বিষয়টি নিয়ে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি আছে কিনা জানতে পারিনি। শুনছি ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন থেকে কর্তৃপক্ষ বেতন কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মোকাব্বির হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে ব্যাংকক, মদিনা, কাঠমান্ডু, ম্যানেচেস্টার ও চেন্নাই রুটে বিমান চলাচল বন্ধ আছে। দু-একটা ফ্লাইট মাঝে মধ্যে চলছে। ব্যাংকক মালয়েশিয়া রুটে এক্সট্রা ফ্লাইট চালানো হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানেসহ কয়েকটি রুটে কার্গো চার্টার্ড ফ্লাইট আমরা চালাচ্ছি। বিমানের এমপ্লয়িদের চিকিৎসা বিল বন্ধ রয়েছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেতনই তো ঠিকভাবে দিতে পারছি না। ইনকামের সোর্সটা কোথায়? তিনি বলেন, ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তেই সবার বেতন কর্তন করা হচ্ছে, চিকিৎসা বিল দেয়া বন্ধ আছে। আমরা তো তাদের দুই ঈদে বোনাস দিয়েছি। এখন টাকা নাই, তাহলে তাদের কিভাবে দেবো? অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এই মাসে (নভেম্বরে) ফ্লাইট কমে গেছে। ডিসেম্বরে আরো কমবে বলে মনে হচ্ছে। তা ছাড়া আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে কোভিড টেস্ট সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। সো এখন যারা এসব বলছেন তাদেরকে নাচানাচি করতে না বলেন। করোনায় কিন্তু অনেকেরই চাকরি গেছে।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে কাঠমান্ডু আর লন্ডনের ম্যানচেস্টার রুট ছাড়া ১৫টি রুটে উড়ছে বিমানের ফ্লাইট। এর মধ্যে ইস্টে সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, চায়নার ক্যান্টন, হংকং আর ওয়েস্টে কলকাতা, দিল্লি, মাস্কাট, আবুধাবি, দোহা, দুবাই, সৌদি আরবের জেদ্দা, রিয়াদ, দাম্মাম ও লন্ডন রুটে নিয়মিত এবং এক্সট্রা ফ্লাইট নাম দিয়ে চলাচল করছে।
এর মধ্যে চায়নার ক্যান্টন এবং হংকংয়ে বিমানের কার্গো ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। অপর দিকে কুয়ালালামপুর, লন্ডন, আবুধাবি, মাস্কাট দুবাই রুটে যেসব ফ্লাইট চলাচল করছে সেগুলোকে এক্সট্রা ফ্লাইট হিসাবে চালানো হচ্ছে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মতে, শিডিউল হোক আর এক্সট্রা ফ্লাইট হোক এখন ১৫টি রুটে আমাদের ফ্লাইট চলছে। সেই হিসাবে বিমানের ইনকামও বাড়ছে।
এক্সট্রা ফ্লাইট প্রসঙ্গে তারা বলছেন, শিডিউল ফ্লাইটে নম্বর দেয়া থাকে। এখন শিডিউল ফ্লাইটের পরিবর্তে সেখানে কুয়ালালামপুরগামী ফ্লাইট ৪০৮৬ নম্বর দিয়ে যাচ্ছে, ব্যাংককের ফ্লাইট যাচ্ছে ৪০৮৮ নম্বর দিয়ে। আর সিঙ্গাপুর যাচ্ছে ৪০৮৪/৪০৮৫ ফ্লাইট নম্বর ব্যবহার করে।