বিনোদন ডেস্ক:
‘বাধার দেয়াল এখনও পেরোতে পারিনি, যে দেয়াল গড়ে দিয়েছে পরিবারের মানুষগুলো। এখনও তারা আমার অভিনেত্রী পরিচয়কে সবার সামনে তুলে ধরতে চায় না। কেন আমি কোনো পেশায় না গিয়ে অভিনেত্রী হলাম? এ প্রশ্ন এখনও তাদের মনে বাসা বেঁধে আছে। তাই যে কাজই করি না কেন- সেখানে না পাই তাদের সমর্থন, না পাই সহযোগিতা। তাই অভিনয়ের জন্য আমাকে এককভাবেই যুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে।’
কিছুটা হতাশা নিয়েই কথাগুলো বললেন অভিনেত্রী ইয়ামিন হক ববি। এক যুগ আগে মডেল থেকে অভিনেত্রী হিসেবে বড় পর্দায় যাঁর অভিষেক হয়েছিল, সেই ববি এখনও সংগ্রাম করে যাচ্ছেন অভিনয়জগতে পথচলার। প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, বরং তিনি সংগ্রাম করে যাচ্ছেন এটা প্রমাণ করতে যে, কোনো কাজই ছোট নয়। যে কাজে ভালোবাসা, নিষ্ঠা, সততা থাকে- তাকে কোনোভাবেই তুচ্ছ করা যায় না। যদিও ববির পরিবারের সদস্যরা এ কথা উপলব্ধি না করলেও দর্শক তাঁকে নিরাশ করেননি। তাই তো অভিনয়ের সুবাদে ববি পরিচিতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি পেয়েছেন অগণিত দর্শকের ভালোবাসা। তাই ববিও চেষ্টা করে যাচ্ছেন অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সেসব দর্শকের হৃদয় আন্দোলিত করে যাওয়ার।
শুরুতেই ববির কাছে প্রশ্ন ছিল, নানা শ্রেণির দর্শকের ভালো লাগা, মন্দ লাগার বিষয়টা একেক রকম। এ ক্ষেত্রে অভিনয়ের বিষয়ে তাঁর ভাবনা কী? এর জবাবে ববি বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই চেয়েছি, ভিন্ন সব গল্প ও চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের বিভিন্ন শ্রেণির সংযোগ তৈরি করে যাওয়ার। আমার মনে হয়, তা কিছুটা হলেও আমি পেরেছি। নইলে দর্শক আমাকে এত দিন মনে রাখত না। তুলে ধরত না তাদের প্রত্যাশার কথা।’
ববির এই কথা থেকে এটা বোঝা যায়, ভার্সেটাইল কাজই প্রাধান্য দেন তিনি। যে কারণে ‘খোঁজ :দ্য সার্চ’ থেকে শুরু করে ‘দেহরক্ষী’, ‘রাজত্ব’, ‘হিরো :দ্য সুপারস্টার’, ‘রাজাবাবু’, ‘ব্ল্যাকমেইল’, ‘বিজলী’, ‘নোলক’সহ অন্যান্য ছবিতে ববিকে দেখা গেছে নতুন সব চরিত্রে। যদিও তাঁর সব ছবি দর্শক প্রশংসা কুড়িয়েছে, এমন নয়। তাঁর কিছু ছবি সমালোচিতও হয়েছে। তাহলে কি ছবি নির্বাচনে ভুল ছিল? এর জবাবে ববি বলেন, ‘প্রথমত. ক্যারিয়ারে শুরুতেই কেউ নিজের পছন্দমতো কাজ করার সুযোগ পান না। যেসব ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে- সেগুলো থেকেই কাজ বেছে নিতে হয়। আর গল্প, চরিত্র যেমনই হোক- তা দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে অভিনয় করে যেতে হয়। আমার ক্যারিয়ারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শুরুর দিকে ছবি নির্বাচনে আমার কিছু ভুল হয়েছে। হয়তো গল্প শুনে যতটা দর্শকের ভালো লাগার মতো ছবি হবে, শেষমেশ দেখা গেছে তা হয়নি। আসলে সিনেমা হলো টিমওয়ার্ক। এখানে গল্পকার থেকে শুরু করে নির্মাতা, অভিনয়শিল্পীসহ প্রত্যেক কলাকুশলীকে যাঁর যাঁর জায়গা থেকে সেরা কাজ তুলে ধরার চেষ্টা করতে হয়। কিন্তু কোনো কোনো সময় কাজ প্রত্যাশামাফিক হয়ে ওঠে না। কাজের অভিজ্ঞতা থেকেই এটা জানা ও বোঝা। যে জন্য এখন প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করছি বুঝেশুনে।’
তাহলে কি আমরা বলতে পারি, আপনার আগামী ছবিগুলোয় দর্শক নতুন এক ববির দেখা পাবেন? “আমার বিশ্বাস, ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময় সামনে অপেক্ষা করছে। কারণ এর মধ্যে ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘পাপ’, ‘বৃদ্ধাশ্রম’, ‘এবার তোরা মানুষ হ’, ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’সহ যে ছবিগুলোয় অভিনয় করেছি, তার গল্প, চরিত্রে ও নির্মাণে যেমন ভিন্নতা আছে, তেমনি আছে নিজেকে ভেঙে নতুনরূপে তুলে ধরার প্রয়াস। আমি জানি, শিল্পীরা বেঁচে থাকেন তাঁদের কাজের মধ্য দিয়ে। তাই সেই কাজই করতে হবে, যা দর্শক-মনে ছাপ ফেলে। দর্শকই হলো সিনেমার প্রাণ। তাই তাঁদের ভালো লাগার বিষয়টি সব সময় মাথায় রাখতে হয়। একই সঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হয়, পর্দায় দর্শক যতক্ষণ আমাকে দেখবেন, ততক্ষণ তাদের যেন মনে হয়, পর্দার মানুষটি ববি নয়, অন্য কেউ। আর এই অন্য কেউ হলো অভিনীত চরিত্রের মানুষটি।”
জনপ্রিয়তা নয়, দর্শক মনে স্থায়ী আসন করে নেওয়ার জন্যই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ববি। যে জন্য অভিনয় হয়ে উঠেছে তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। কিন্তু এটাও অবাক করে, সমসাময়িক তারকাদের অনেকেই ছোট পর্দায় কাজ করেছেন, কিন্তু ববির দেখা মিলছে না! কারণ কী? ববি বলেন, “আমি আসলে সিনেমার বাইরে আর কিছু নিয়ে কখনও ভাবিনি। ভালোবাসার খাতিরে ছোট পর্দায় কাজ করা যেতে পারে, কিন্তু আমি চাই না। তবে ওটিটিতে কাজ করতে আপত্তি নেই। ‘সুরভী’তে অভিনয় করে অনেকের ভালোবাসা পেয়েছি। এমন কাজের সুযোগ হলে ওয়েব সিরিজ, ওয়েব ফিল্মেও কাজ করব। তবে সিনেমাই প্রাধান্য পাবে সব সময়। সিনেমার প্রতি যে আকর্ষণ, তা আর কোনো কিছুতেই পাই না।”
বিএসডি/এফএ