বিনোদন ডেস্ক:
আলোচিত অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। ওই পোস্টে সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেন তিনি।
সাবেক স্বামী হারুনুর রশীদ অপুর বিরুদ্ধে শবনম ফারিয়ার অভিযোগ— তিনি তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন। রাগারাগির একপর্যায়ে হাতাহাতিও হয় দুজনের মধ্যে। এতে শবনমের হাতের আঙুল ভেঙে যায়। নায়িকার এই পোস্টের পর তোলপাড় শুরু হয়। শবনমের ভক্ত-শুভানুধ্যায়ী ও সহকর্মীরা এ ঘটনার নিন্দা জানান এবং তার সাবেক স্বামীর বিচার দাবি করেন।
অপু অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, শবনমের অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা।
অপুর এ বক্তব্য প্রচার হওয়ার পর সাংবাদিকরা শবনম ফারিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাচ্ছিলেন না।
রোববার রাতে হঠাৎ শবনম ফারিয়া তার ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে দীর্ঘ একটি পোস্ট দেন। যেখানে তিনি নিজের সম্মান রক্ষার্থে বিষয়টি নিয়ে আর এগোতে চান না বলে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তার জীবনের কোনো বিষয়ের সঙ্গে অপুকে না টানার অনুরোধ করেছেন শবনম।
শবনম ফারিয়ার পোস্টটি হবহু তুলে ধরা হলো—
‘এতদিন পর এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলা আমার জন্য বিব্রতকর। কিন্তু এত সংবাদকর্মী ভাইদের কল। কয়দিন ফোন বন্ধ করে রাখব? তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু কথা বলতে হচ্ছে…
প্রথমত আমি একটা পোস্ট শেয়ার করেছিলাম, যেখানে আমি কিছুটা আবেগের বসে ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলাম। শেয়ার করাটা সমস্যা না, সমস্যা হলো— আমার পর্দার বাইরের জীবন এত সাধারণ কিংবা আমার পরিবার এবং চারপাশের মানুষ আমাকে এতই সাধারণভাবে ট্রিট করে আমি হয়তো বুঝি না যে, আমিও সম্ভবত ‘তারকা তালিকায়’ পড়ি এবং আমার একটা কথা নিয়ে আলোচনা হয়! সম্ভবত সে জন্যই প্রায়ই কিছুটা ব্যক্তিগত কথা লিখে ফেলি।
মূল কথায় আসি— আমি আমার সেই পোস্টে কোনোভাবেই কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে অভিযোগ করিনি। সম্পূর্ণ অভিযোগ ছিল আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে! ডিভোর্স জিনিসটা এত নোংরাভাবে না দেখলে হয়তো অনেক মেয়ের এভাবে জীবন দিতে হতো না!
আমার পয়েন্ট ছিল, যেদিন হাতের আঙুল ভাঙে, সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম এই বিয়ে অলরেডি টক্সিক হয়ে গেছে! কিন্তু আমরা আমাদের জীবনের প্রায় আড়াই বছর একটা মরা গাছে পানি দিয়ে গেছি শুধু ‘মানুষ কি বলবে’ এটি ভেবে!
দ্বিতীয়ত আমি বিবাহ বিচ্ছেদের পর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমার জীবনে যিনি ছিলেন তাকে সম্মান দেখাতে। যদিও ওনার প্রতি আমার অভিযোগ রাগ-ক্ষোভ কোনোটারই অভাব নেই। আমি শিওর ওনারও একই অনুভূতি! আমার বিশ্বাস তবু উনিও সর্বোচ্চ সম্মান দেখাতেই চেষ্টা করেছেন!
এখন আঙুল ভাঙার বিষয়টি— এটি অবশ্যই সত্যি, কিন্তু এমন না যে বিষয়টি ও ইচ্ছে করেই করেছে! রাগারাগির একপর্যায় হাতাহাতিও হয়, তার পর আমার আঙুল ভেঙে যায়। তা হলে এখন উনি অস্বীকার কেন করছেন?
হঠাৎ এমন পাবলিক প্রতিক্রিয়া হলে আপনি কি করবেন?
আপনিও ডিনাই করবেন!
তৃতীয়ত নিউজে আমার নামের সঙ্গে যার নাম বারবার আসছে, তিনি বিষয়টি অস্বীকার করছেন; আর এত বছর পর যেহেতু কথা উঠছে, তখন বিষয়টি প্রমাণ করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কিন্তু হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ কিংবা বিল কার্ড থেকে পরিশোধ হয়েছে সেগুলো বের করার সুযোগ এখনও আছে। কিন্তু যেহেতু সেই ব্যক্তির মা কল করলে আমি তাকে এখনও ‘মা’ ছাড়া অন্য কিছু ডাকতে পারি না। তাই মা এবং আমার নিজের সম্মান রক্ষার্থে বিষয়টি এখানেই শেষ করতে চাই!
পুরনো বিষয় ঘেঁটে কিচ্ছু পাব না আমরা দুজন।
এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা থাকলে বিচ্ছেদের সময়ই আমি এত প্রেম না দেখিয়ে এসবই বলতাম। হয়তো তখন আমি যেসব সমালোচনা হজম করেছি তা করতে হতো না। লাভটা আমারই হতো।
চতুর্থত কোথায় যেন সংবাদ দেখলাম এতদিন পর জানা গেল কি কারণে বিচ্ছেদ হয়েছে আমাদের, এ ঘটনাই নাকি কারণ। বুঝলাম এখনও সবার খুব জানার আগ্রহ আমাদের বিচ্ছেদের কারণ কী!
আমাদের আসলে সে অর্থে কখনও সংসারই করা হয়নি। কারণ আমাদের নিজেদের কখনও কোনো বাসা ছিল না! ওদের তিন বেডের বাসায় ওর মা, ওরা চার ভাই, ভাবি, ভাতিজি এবং দুজন বুয়া থাকত! সেখানে আমার থাকার জন্য যে ঘর বরাদ্দ ছিল, সেটির সঙ্গে এটাচড কোনো ওয়াশরুম ছিল না। ওর মায়ের বেডরুমে সাতজনের সঙ্গে ওয়াশরুম শেয়ার করতে হতো। তাই আমি খুব বেশি দিন সেই বাসায় থাকিনি। আমরা তিন বোন, এত ছেলেদের ঘরে অ্যাডজাস্ট করতে সমস্যা হতো। তা ছাড়া আমার শুটিংয়ের জন্য অনেক কস্টিউম/প্রপ্স অনেক কিছু থাকে। আলাদা একটা কস্টিউম রুমই লাগে! তা ছাড়া আমার মায়ের বাসা আর তাদের বাসা কাছাকাছি হওয়ায় এবং দুজনেরই বাবা না থাকায় আমরা দুজন দুজনের মায়ের সঙ্গে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম! ফলে স্বাভাবিক ম্যারিড কাপলের মধ্যে যেসব ইন্টিমেসি থাকে তা আমাদের মধ্যে ছিল না! মূলত এ কারণেই আমরা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্তে আসি। অবশ্যই এর বাইরে আরও হাজারটা কারণ তো আছেই! সেগুলোও পাবলিক প্লাটফরমে লিখে আর আলোচনা চাই না।
পঞ্চমত এতদিন পর এ কথা উঠল কেন?
উত্তর ‘আমার দোষ!’
আমি অতি আবেগী হয়ে ঘরের কথা পরকে জানিয়েছি। এভাবে একটা পাবলিক প্ল্যাটফরমে লেখার আগে এইটার ফলাফলগুলো আমার ভাবার দরকার ছিল! কিন্তু একটা বিষয় না বললেই নয়, অনেকের মন্তব্য আমার সেই বিচারপতির মতো লাগছে, যিনি বলেছিলেন— রেপ হওয়ার তিন দিন পর কেন কেইস করেছে? আরও আগে করা উচিত ছিল।
তবে এ বিষয়টি নিয়ে তখনও আমি আমার ব্যক্তিগত ফেসবুকে লিখেছিলাম, যেখানে আমাদের দুই পরিবারের সদস্যরাই ছিল। কিন্তু পাবলিক প্রোফাইলে এসব লিখলে কি হয় তা তো এবার দেখলামই!
বিএসডি/জেজে