নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে পদ্মা নদীর ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর ৩৭ মিটার ভাঙলেই বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাবে। ভাঙন ঝুঁকিতে পড়ায় ওই বিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও এলাকাবাসী।
চরভদ্রাসন উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের ছবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী গ্রামে এ ভাঙন শুরু হয়েছে। গত আগস্টের মাঝামাঝিতে ভাঙন দেখা দিলেও গতকাল শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যায়। এক বিকেলেই পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যায় অন্তত ১৫ শতাংশ ফসলি জমি। ভাঙনের ফলে ঝুঁকিতে পড়ে যায় ছবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলটি বাড়ির পাশে হওয়ায় তাদের পড়াশোনা ভালোই চলত। নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলে দূরের কোনো স্কুলে গিয়ে তাদের পড়াশোনা কতটুকু হবে সেই ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা শঙ্কিত।
ছবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা এক শিক্ষার্থীর বাবা রাসেল (৩০) বলেন, আমার ছেলে এই স্কুলে লেখাপড়া করে। স্কুলটি ভাইঙ্গা গেলে ওর পড়ালেখা বন্ধ হইয়া যাবে।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, গত আগস্ট মাস থেকে ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। তবে গত শুক্রবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) ভাঙন ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। এখনই এ ভাঙন রোধ করা না গেলে ১৫০ জন শিক্ষার্থী ও চারজন শিক্ষক নিয়ে আমরা এক অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যাব। তিনি বলেন, বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
ছবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী গ্রামটি চর হরিরামপুর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সালাম ফকির জানায়, গতকাল শুক্রবার(১৭ সেপ্টেম্বর) এক ঘন্টার মধ্যে স্কুল সংলগ্ন এলাকায় পদ্মা নদী আনুমানিক দেড়শ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ক্ষেত্র বিশেষ চার থেকে পাঁচ মিটার প্রস্থ হয়ে ভেঙ্গে গেছে। তিনি বলেন, এর ফলে ওই স্কুল ছাড়াও ওই এলাকায় বসবাসকারি ৬০টি পরিবার ভাঙণের ঝুঁকিতে রয়েছে।
ওই এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত আগস্টে ওই এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিলে বালু ভর্তি অন্তত পাঁচ সহস্রাধিক জিও ব্যাগ স্থাপন করা হয়। কিন্তু শুক্রবারের(১৭ সেপ্টেম্বর) ভাঙ্গনে ওই বালির বস্তাগুলি সব বিলিন হয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী আরও জানায়, ইতিমধ্যে ওই স্কুলের কাছে পদ্মা নদীর পাড়ে পাঁচ মিটার বড় একটি ফাটল ধরেছে । ওই মাটিও ধসে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল মো. বাহাউদ্দিন বলেন, গত আগস্টে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু ভর্তি বস্তা ফেলেছিল। আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হবে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, নদী ভাঙনের ঘটনা শুনে তিনি শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে চরভদ্রাসনের নদীভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ইতোমধ্যে ছবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গীতে ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে ভাঙনরোধে স্থায়ী কাজ করা হবে।
বিএসডি/আইপি