নিজস্ব প্রতিবেদক:
আর্থিক খাতে কাঠামোগত দুর্বলতা দূর করা জরুরি বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রতিনিধি দলের প্রধান রাহুল আনন্দ। ১৪ দিনের সফর শেষে রোববার ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
৫ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আইএমএফের সফরকারি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, অর্থসচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। এছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ব্যাংক, শ্রমিক ইউনিয়ন ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছে প্রতিনিধি দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দল প্রধান রাহুল আনন্দ কিছু লিখিত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। তার মতে, বাংলাদেশের আর্থিক খাতে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তার রাশ কিছুটা শিথিল করতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত প্রণোদনা থেকে সময়মতো বেরিয়ে আসতে হবে। খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে করপোরেট সুশাসন, আইনি কাঠামো, নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ জরুরি। একইভাবে খেলাপি ঋণ শনাক্তকরণ ও ঋণমান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণে বৈশ্বিক মান বজায় রাখতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়েও পরামর্শ দিয়েছেন রাহুল আনন্দ। তিনি বলেন, কোভিড-উত্তর পৃথিবীতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এবং এলডিসি উত্তরণ সার্থক করতে হলে বাংলাদেশকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি। বেসরকারি খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। এর মধ্যে শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার সক্ষমতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে যাওয়া এবং সরকারের সহায়ক নীতির কারণে প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগবে। এখানেই শেষ নয়, আরও সুখবর দিয়েছে দাতা সংস্থাটি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। বৈশ্বিক ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি এবং টিকাদান কর্মসূচি গতি পাওয়ার কারণে প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের (বিবিএস) সাময়িক হিসাব অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আইএমএফ বলছে, সরকার অর্থনীতি চাঙা করতে বাজেটে যে বরাদ্দ দিয়েছে, তার প্রভাব অর্থনীতিতে অনুভূত হচ্ছে। প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে রাজস্বের যোগান বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। কিন্তু দেশে রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত অত্যন্ত কম। এই বাস্তবতা ঝুঁকি হিসাবে চিহ্নিত করেছে আইএমএফ। তাদের পরামর্শ, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও নীতি কাঠামোর আধুনিকায়ন জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে আইএমএফ। তবে ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদ বেঁধে দেওয়ার সমালোচনা করেছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে এ হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে রাহুল আনন্দ বলেন, ব্যাংকিং খাতে বড় ঝুঁকি খেলাপি ঋণ। এ ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। এটা কমিয়ে আনতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিএসডি/এসএফ