বর্তমান সময় ডেস্ক:
শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্রী কুসুম খাতুন। ভাতা তুলতে এখন আর তাকে কয়েক মাইল দূরে যেতে হচ্ছে না। রাষ্ট্র পরিচালিত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ‘নগদ’-এর কারণে সে এই সুবিধা পাচ্ছে। তাই কুসুম অনেক খুশি।
কুসুম বলেন, ‘খোঁড়া পা নিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাজশাহী সদরের কৃষি ব্যাংকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। এটা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল।’
কিন্তু বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের এমএফএস শাখা কুসুমের কষ্টের কথা জানতে পেরে নিকটস্থ এমএফএস এজেন্টের মাধ্যমেই যেন সে টাকা তুলতে পারে সে ব্যবস্থা করেছে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বাসিন্দা কুসুম বলেন, ‘নগদ’ গ্রামীণ জনগণের জীবন সহজ করেছে। তাদের ফোন-ভিত্তিক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা দিচ্ছে।
কুসুমের মতো সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ কোটি মানুষ মোবাইল মানিব্যাগের মতো নগদ ব্যবহার করছে। এই প্লাটফরমের মাধ্যমে প্রতিদিন ৭০০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। এটি এখন দেশের আর্থিক খাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে প্রধান ভূমিকা পালন করছে।
নগদ বাংলাদেশের প্রথম কোনো কোম্পানি যারা গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করতে ইলেক্ট্রনিক কেওয়াইসি (ই-কেওয়াইসি) চালু করে।
২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘নগদ’ উদ্বোধন করার সময় ‘নগদ’ ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো কোম্পানিতে ই-কেওয়াইসি’র প্রচলন ছিল না। এর ফলে এক দিকে যেমন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট খোলার জটিল প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে, অন্যদিকে অ্যাকাউন্ট খোলা সংক্রান্ত খরচও হ্রাস পেয়েছে।
ই-কেওয়াইসি হিসাব বা অ্যাকাউন্ট খোলার একটি প্রক্রিয়া। এতে একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে কোনো অফিসে না গিয়ে বা কোনো ফরম পূরণ না করেই জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই দিকে ছবি তুলে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
প্রথম দিকে অনেকে এর সমালোচনা করলেও একে একে সব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি, ব্যাংক ও আর্থিক কোম্পানিগুলো ‘নগদ’-এর উদ্ভাবনকে অনুসরণ করে। এতে সময় ও খরচ বেঁচে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসাও গতিশীল হয়েছে এবং ডিজিটালাইজেশনও নিশ্চিত হয়েছে।
নগদের প্রধান গণযোগাযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুরুতে অনেকেই নগদের ই-কেওয়াইসি প্রক্রিয়ার সমালোচনা করলেও এখন সব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি, ব্যাংক ও আর্থিক কোম্পানিগুলো ‘নগদ’-এর উদ্ভাবনকে অনুসরণ করছে।’
দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে স্মার্টফোন না থাকায় তারা এই ই-কেওয়াইসি সুবিধা নিতে পারছেন না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, নগদ মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি নতুন সুবিধা চালু করেছে। এতে একজন সাধারণ মোবাইল ব্যবহারকারীও তার মোবাইল থেকে অ্যাকাউন্ট খুলে এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
ই-কেওয়াইসি জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই দিকের ছবি তুলে অ্যাপের মাধ্যমে আপলোড করে অ্যাকাউন্ট খোলার সহজ পদ্ধতি। কিন্তু দেশে যেহেতু স্মার্টফোনের ব্যবহার অনেক কম, সে কারণে পরে ‘নগদ’ *১৬৭# ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি চালু করেছে।
ফলে এখন যে কোনো মোবাইল ফোন থেকে *১৬৭# ডায়াল করে চার ডিজিটের পাসওয়ার্ড দেওয়ার মাধ্যমে ‘নগদ’-এর অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব।
আধুনিক ও প্রতিযোগিতামূলক সেবার কারণেই ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ‘নগদ’ এখন দৈনিক গড়ে ৭০০ কোটি টাকার লেনদেন করছে। ইতোমধ্যে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়ে ওঠা কোম্পানি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ‘নগদ’ জাতীয় প্রবৃদ্ধিতেও রাখছে অবদান। অচিরেই ‘নগদ’-এর মাধ্যমে নাগরিকাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি লেনদেন করা সম্ভব হবে বলেও জানিয়েছেন সেবা প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
শুরু থেকেই ডাক বিভাগের এই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসটি সেন্ড মানি বা টাকার লেনদেনকে ফ্রি করেছে। একইভাবে সব পরিষেবার বিল ফ্রি-তে দেওয়ার প্রচলন করে ‘নগদ’। তাছাড়া এক বছরেরও বেশি সময় আগে ‘নগদ’ ক্যাশ-আউট চার্জ হাজারে ৯ টাকা ৯৯ পয়সায় (ভ্যাটসহ ১১ টাকা ৪৯ পয়সা) নামিয়ে আনে।
বিএসডি/এসএফ