যে আট খেলোয়াড় সিদ্ধান্তটার বলি হচ্ছেন, তাঁরা হলেন লিভারপুলের গোলকিপার আলিসন, স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনো ও মিডফিল্ডার ফাবিনিও; ম্যানচেস্টার সিটির গোলকিপার এদেরসন ও স্ট্রাইকার গাব্রিয়েল জেসুস; ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার ফ্রেদ; চেলসির ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা ও লিডস ইউনাইটেডের উইঙ্গার রাফিনিয়া।
এভারটনের উইঙ্গার রিচার্লিসনও ব্রাজিল দলে ডাক পেয়েও যেতে পারেননি, কিন্তু ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে এভারটনের ভালো সম্পর্কের কারণে রিচার্লিসন এ নিয়ম থেকে ছাড় পাচ্ছেন। গত জুনে কোপা আমেরিকার পর গত আগস্টে অলিম্পিকের ব্রাজিল দলের জন্যও রিচার্লিসনকে যেতে দিয়েছিল এভারটন।
ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, ফিফার টুর্নামেন্টের জন্য জাতীয় দলে ডাক পাওয়া খেলোয়াড়দের ছাড়তে ক্লাব বাধ্য থাকবে। ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বও তো ফিফারই আয়োজন। কিন্তু করোনার নিয়ম-নীতির কারণে এবার এই খেলোয়াড়দের ছাড়েনি ইংলিশ ক্লাবগুলো। ব্রাজিল থেকে ইংল্যান্ডে ঢোকার আগে ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হতো একজন খেলোয়াড়কে।
মৌসুমের মধ্যেই এভাবে ১০ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকা মানে ১০ দিন খেলোয়াড়েরা খেলার মধ্যে থাকবেন না, অনুশীলনও হবে না। সে ক্ষেত্রে তাঁদের ফিটনেস কমবে, চোটের শঙ্কা বাড়বে…এই যুক্তিতেই ইংলিশ ক্লাবগুলো ৮ ব্রাজিলিয়ানকে ছাড়েনি।
লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার সিটির ‘নিষিদ্ধ’ খেলোয়াড় বেশি হলেও তারা শুধু লিগের ম্যাচে তাদের খেলোয়াড়কে পাবে না। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর চেলসির ক্ষেত্রে ‘নিষিদ্ধ’ খেলোয়াড় একজন হলেও তাদের ঝামেলাটা আরেকটু বেশি।
ব্রাজিলের ফেডারেশন তখন যুক্তরাজ্যের সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিল, খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে নিয়মটা শিথিল করার জন্য। ফিফাও অনুরোধটা করেছিল, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।
এ নিয়ে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন মহাখ্যাপা ছিল ইংলিশ ক্লাবগুলোর ওপর। সেই ক্ষোভেরই পরিণতি এখন খেলোয়াড়দের পাঁচ দিন মাঠের বাইরে থাকা। ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট গোলডটকম জানাচ্ছে, ফিফা এরই মধ্যে ব্রাজিলিয়ান ফেডারেশনের আরোপিত ক্লাবগুলোকে ‘৫ দিনের নিয়ম’-এর কথা জানিয়ে দিয়েছে।
৫ দিন কেন?
আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য খেলোয়াড় ছাড়ার ক্ষেত্রে ক্লাবগুলোর ‘দাদাগিরি’র ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দলগুলোর স্বার্থ রক্ষার্থে এই নিয়ম আগেই করে রেখেছে ফিফা। যে খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালনের জন্য ছাড়া হবে না, ফিফার নিয়মের মধ্যে থেকেই সে খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক বিরতি শেষ হওয়ার পরের পাঁচ দিন ক্লাবের হয়ে খেলতে দেওয়া হবে না। এবারের আন্তর্জাতিক বিরতি শেষ হচ্ছে ৯ সেপ্টেম্বর, সে ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলোয়াড়দের মাঠের বাইরে থাকতে হবে।
ফিফার শৃঙ্খলাবিধির ধারা নম্বর ২২ অনুযায়ী, ক্লাবগুলো ৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার এই নিয়ম না মানলে নিষিদ্ধ থাকা খেলোয়াড়কে যে ম্যাচে খেলানো হয়েছে, সেই ম্যাচের ফল বাতিল করা হবে (ওই খেলোয়াড়ের দলকে ৩-০ গোলে পরাজিত ঘোষণা করা হবে)। পাশাপাশি ক্লাবকে তো জরিমানা করা হবেই, খেলোয়াড়কেও জরিমানা করা হতে পারে।
ইংলিশ ক্লাবগুলো কী করবে?
ব্রাজিলের ফেডারেশনের অনুরোধে ফিফার এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ইংলিশ ক্লাবগুলো কাজ করতে শুরু করেছে। শাস্তিটা কমানোর লক্ষ্যে সমঝোতার জন্য ক্লাবগুলো কাজ করছে বলে জানাচ্ছে গোলডটকম। বছরের শেষ দিকে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো দলগুলোর আরও দুটি করে ম্যাচ আছে, সেটি হিসেবে রেখে সমঝোতায় পৌঁছানো জরুরি বলেও ভাবছে ক্লাবগুলো—এমনটাই জানাচ্ছে গোল।
কার কোন ম্যাচ?
আগামী রোববার লিভারপুল যাবে লিডস ইউনাইটেডের মাঠে। ম্যানচেস্টার সিটি শনিবার যাবে লেস্টার সিটির মাঠে। তবে এই দুই দলের ‘নিষিদ্ধ’ খেলোয়াড় বেশি হলেও তারা শুধু লিগের ম্যাচে তাদের খেলোয়াড়কে পাবে না। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর চেলসির ক্ষেত্রে ‘নিষিদ্ধ’ খেলোয়াড় একজন হলেও তাদের ঝামেলাটা আরেকটু বেশি।
ম্যান ইউনাইটেডের ফ্রেদ রোববার লিগে নিউক্যাসলের বিপক্ষে ম্যাচে তো খেলতে পারবেনই না, খেলতে পারবেন না চ্যাম্পিয়নস লিগে ইয়াং বয়েজের বিপক্ষে ম্যাচও।
চেলসির থিয়াগো সিলভাকে নিয়েও ঝামেলা একই। লিগে অ্যাস্টন ভিলা ও চ্যাম্পিয়নস লিগে জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গের বিপক্ষে সিলভাকে পাবে না চেলসি।
ব্রাজিলের মতো চিলি, মেক্সিকো ও প্যারাগুয়েও ইংল্যান্ডভিত্তিক খেলোয়াড়দের ওপর পাঁচ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করতে ফিফার কাছে যেতে পারে।
বিএসডি/এএ