আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাকে পানির মজুদ ৮০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির এক সরকারি কর্মকর্তা। চলতি বছরে খরার মতো শুষ্ক বর্ষা মৌসুম এবং ফোরাত ও দজলা নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়াই এর প্রধান কারণ।
সোমবার (২৬ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, ৪ কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার দেশ ইরাক জলবায়ু পরিবর্তন, খরা, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাত হ্রাসের কারণে এক ভয়াবহ পরিবেশগত সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ইরাকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিবেশী ইরান ও তুরস্কে নির্মিত বাঁধগুলোর কারণে ঐতিহাসিক ফোরাত ও দজলা নদীর পানিপ্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। হাজার বছর ধরে এই নদী দুটি ইরাকের কৃষিকে সেচ সুবিধা দিয়ে এসেছে।
ইরাকের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খালেদ শামাল এএফপিকে বলেন, “গ্রীষ্মের মৌসুম শুরু হওয়ার সময় আমাদের পানি মজুদের পরিমাণ অন্তত ১৮ বিলিয়ন কিউবিক মিটার হওয়া প্রয়োজন, কিন্তু বর্তমানে আমাদের কাছে রয়েছে মাত্র ১০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার।”
তিনি আরও জানান, “গত বছর আমাদের কৌশলগত মজুদ এর দ্বিগুণ ছিল। এ বছর পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। গত ৮০ বছরে আমরা কখনও এত কম পানি মজুদ দেখিনি”।
এর মূল কারণ হিসেবে তিনি নদীগুলোর পানিপ্রবাহ কমে যাওয়াকে দায়ী করেন।
শামালের মতে, এই বছর শীত মৌসুমে বৃষ্টিপাত খুবই কম হয়েছে এবং পাহাড়ি অঞ্চলে বরফ গলনের পরও পানির স্তর আশানুরূপ বাড়েনি। জাতিসংঘ ইরাককে জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু প্রভাবের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচ দেশের একটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
দেশটিতে পানির সংকটের কারণে বহু কৃষক তাদের জমি অনাবাদি রাখতে বাধ্য হয়েছেন। সরকার কর্তৃক খরিফ মৌসুমে পানির সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে কৃষিকাজে ব্যাপক কাটছাঁট করা হয়েছে।
ইরাকের কৃষি পরিকল্পনা বরাবরই পানির প্রাপ্যতার ওপর নির্ভরশীল। এ বছর কর্তৃপক্ষ প্রায় ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ডুনাম (৩ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর) সবুজ এলাকা ও উৎপাদনশীল কৃষিভূমি সংরক্ষণে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান শামাল।
এছাড়া গত বছর কৃষকদের ২৫ লাখ ডুনাম জমিতে ভুট্টা, ধান ও ফলের বাগান চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল বলে পানি মন্ত্রণালয়ের তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে ফোরাত ও দজলা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ইরাক ও তুরস্কের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েন রয়েছে। তুরস্ক বহুবার বাগদাদকে পানি ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে।
গত বছর ইরাক ও তুরস্ক ১০ বছর মেয়াদি একটি ‘ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি’ স্বাক্ষর করে, যার মূল লক্ষ্য ছিল পানি ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নের জন্য যৌথ বিনিয়োগ।