নিজস্ব প্রতিবেদক
ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ ও লুটেরাদের ভয়ের কারণ বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় ইসলামী আলোচক ও ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সাধারণ ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকলেও এক্ষেত্রে একটা শ্রেণি বড় বাধার কারণ। তাদের ভয় হলো, দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের আর সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, লুটপাট ও দখলদারিত্বের কোনো সুযোগ থাকবে না।
শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সিরাত উদযাপন কমিটি আয়োজিত সিরাতুন্নবী (সা.) মাহফিলে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা আবু তাহের জিহাদির সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মান্নানের সঞ্চালনায় মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনা পেশ করেন আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের খতিব আওলাদে রাসূল সাইয়েদ আনোয়ার হোসাইন তাহের আল জাবেরি আল মাদানী। এছাড়াও দেশবরেণ্য ওলামা-মাশায়েখরা বক্তব্য দেন। বক্তারা ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধভাবে এক কাতারে শামিল থাকার ঘোষণা দেন।
মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হলে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, দখলদার, লুটেরাদের ভয়ের কারণ আছে। কারণ ইসলামে সন্ত্রাসের, চাঁদাবাজির, দুর্নীতির, লুটপাটের, দখলদারিত্বের কোনো সুযোগ নেই। এজন্যই অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হতে দেয়নি। এমনকি ইসলামী দলগুলোর মধ্যেও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিরোধ সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, এত সব অপচেষ্টার পরও বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ইসলামী দলগুলো বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে শামিল হওয়ার পথে রয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মানবতার মুক্তির জন্য মুহাম্মদ (সা.) আর্বিভূত হয়েছেন। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম। আর সেই ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামী চায় এই আন্দোলনে দেশের সব ইসলামী দল ঐক্যবদ্ধভাবে শামিল হোক।
তিনি বলেন, দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে নারীরা তাদরে সামগ্রিক অধিকার পূর্ণ ভোগ করতে পারবে। অথচ ইসলাম বিদ্বেষীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে নারীদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হবে, ভিন্ন ধর্মের মানুষকে ধর্ম পালনে বাঁধা দেবে, জোর করে মুসলমান করা হবে। কিন্তু এরাই আবার মহানবীকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে স্বীকার ও বিশ্বাস করে। মহানবী যদি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হন তাহলে তিনি যেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, সেই ইসলাম বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা হলে কীভাবে নারীর অধিকার ছিনিয়ে নেবে? কীভাবে ভিন্ন ধর্মের মানুষের ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া হবে?
প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, ইসলামই একমাত্র শান্তির ধর্ম। এসময় অপপ্রচার বন্ধ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শামিল হতে সবার প্রতি আহ্বান জানান নূরুল ইসলাম বুলবুল।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এ দেশের তরুণরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের রক্ত দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায়ী করেছে। হাসিনা বিদায় না হলে এ দেশে স্বাধীনভাবে ইসলাম প্রচার করা যেত না। আজকের এই সিরাত মাহফিলও করতে দেওয়া হতে না। ছাত্রদের উই আর জাস্টিস প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাসুলের শিক্ষায় দেশ পরিচালনা করতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেই উই আর জাস্টিস প্রতিষ্ঠা হবে।
তিনি আরও বলেন, যুব সমাজ যেভাবে দলে দলে ইসলামের দিকে ধাবিত হচ্ছে এতে ইসলামের দুশমনদের অন্তরে জ্বালা বেড়ে যাচ্ছে না জানি ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়। আমরা বলছি অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবেই, হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলছে, আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, রাষ্ট্র মেরামতে সিরাতকে সামনে রাখতে হবে। রাসুলের সিরাতকে সামনে রাখলে এ দেশে ঘরে ঘরে ওমর (রা.) মতো মানুষ তৈরি হবে। নয়ত সালমান এফ রহমানের মতো অমানুষ তৈরি হবে। ফাতেমা (রা.) মতো নারী তৈরি হবে, নয়ত পলাতক খুনি হাসিনার মতো নির্লজ্জ বেহায়া নারী তৈরি হবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দিয়েছে এ দেশের মানুষকে চোরের খনি আর জামায়াতে ইসলামী দিয়েছে শহীদ নিজামী, মুজাহিদ আর আল্লামা সাঈদীর মতো সোনার মানুষ দুর্নীতি মুক্ত পরিশুদ্ধ নেতা। জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতার বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কেউ দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেনি। আগামীতে পারবে না। তাই জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব বলে এ দেশের জনগণ বিশ্বাস করে। জনগণের সেই বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ শিগগিরই ঘটবে।
সিরাতুন্নবী (সা.) মাহফিলে অন্যদের মধ্যে আলোচনা পেশ করেন সাইয়েদ কামাল উদ্দিন আবদুল্লাহ জাফরি, শায়খ মাওলানা আবদুল হামিদ, মাওলানা মুসাদ্দিক বিল্লাহ আল মাদানী, মাওলানা শাখায়াত হোসাইন রাজী, ড. মুফতি আবু ইউসুফ খান, ড. খলিলুর রহমান মাদানী, প্রফেসর ড. আব্দুস সামাদ, প্রফেসর ড. রফিকুর রহমান মাদানী, কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, মুহাদ্দিস মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা মোশাররফ হোসাইন, মাওলানা ড. জাকারিয়া নুর, শায়েখ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, হাফেজ মাওলানা মুফতি আমির হামজা প্রমুখ।
সিরাত মাহফিলের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে জাতীয় এ আয়োজনে পরিবেশনা উপস্থাপনা করে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, মহানগর, অনুপম, জাগরণ, বিশ্বজয়ী হাফেজে কুরআন তাকরিম হাসান, শিল্পী মশিউর রহমান, শিল্পী গাজী আনাস, শিল্পী দিদারুল ইসলাম প্রমুখ।