নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদুল আজহার পরও থেমে নেই রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক প্রবাহ। চলতি জুন মাসের প্রথম ১৪ দিনেই প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৬৪ কোটি (১.৬৪ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২০ হাজার ২২১ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসাবে)। দৈনিক গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১১ কোটি ৭৪ লাখ ডলার বা এক হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা।
রোববার (১৫ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতেও এ গতি অব্যাহত থাকলে, জুন মাস শেষে রেমিট্যান্স ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানো এ রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি ফিরিয়েছে। ঈদের আগে প্রবাসীদের পাঠানো টাকার গতি বাড়লেও ঈদের পরও যে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে, তা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ, প্রণোদনা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নতির ফলেই রেমিট্যান্সে এ ধারাবাহিকতা এসেছে।
সবশেষ মে মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড গড়েছে ২০২৫ সালের মার্চ মাস। ওই মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলার, যা এক মাসে রেমিট্যান্স আহরণের সর্বোচ্চ পরিমাণ।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে এবং আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার এবং নভেম্বর মাসে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার এবং মে মাসে ২৯৭ কোটি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা ৮ মাস দুই বিলিয়ন এবং মার্চে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ৮৬৫ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে একই সময় রেমিট্যান্স এসেছিল দুই হাজার ৩০২ কোটি মার্কিন ডলার।
বাড়ছে রিজার্ভ
রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় ইতিবাচক থাকায় বাড়ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী (১৫ জুন) পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মোট বা গ্রোস রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারে। তবে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এখনো ১৬ বিলিয়নের ঘরে রয়েছে।