ক্রীড়া ডেস্ক,
গত শনিবার সকালের দৃশ্য। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তাইজুল ইসলামের বল খেলছিলেন মুশফিকুর রহিম। যে উইকেটে তাঁরা অনুশীলন করছিলেন, সেটি হালকা সবুজ ঘাসে ঢাকা। কিন্তু কিছুক্ষণ অনুশীলনের পরই আসল চেহারাটা বেরিয়ে আসে উইকেটের। কয়েক ওভার পরই উইকেটে তৈরি হয় ক্ষত। মিরপুরের উইকেটের এটাই বৈশিষ্ট্য। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজের উইকেটের চরিত্রও ছিল এ রকমই।
পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ছিল ১৩১ রান। সিরিজের উইকেট যে ব্যাটসম্যানদের জন্য দুঃস্বপ্নই ছিল সেটি, এরপর আর সেটি আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলে থাকা এক ক্রিকেটার উইকেট নিয়ে বলছিলেন, ‘আমি ক্রিজে গিয়ে গার্ড নেওয়ার সময়ই বুঝতে পারতাম উইকেটটা কেমন। স্পাইক দিয়ে মাটিতে দাগ দিতেই নরম মাটি উঠে আসত। এই উইকেটে রান ১২০-১৩০–এর বেশি হবে না, তখনই বুঝতে পারতাম। আমরা খেলেছিও সেভাবে।’
অস্ট্রেলিয়ার পর নিউজিল্যান্ড দলও বাংলাদেশে আসছে পাঁচ টি–টোয়েন্টির সিরিজ খেলতে। এই সিরিজে উইকেটের চরিত্র কেমন হতে পারে, সেই আলোচনাও এর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। উইকেট নিয়ে মাঠকর্মীদের ব্যস্ততাও বাড়ছে। আপাতত ঘাস রেখেই প্রস্তুত হচ্ছে প্রতিটি উইকেট। কোন উইকেটে খেলা হবে, শেষ পর্যন্ত উইকেটের চরিত্র কেমন হবে, সেসব নির্ভর করবে টিম ম্যানেজমেন্টের চাহিদার ওপর। কাল যেমন জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার বলছিলেন, ‘এই বিষয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের চাহিদার গুরুত্বই বেশি থাকে। তবে সিদ্ধান্তটা সাধারণত সবার সমন্বয়ে হয়। সে আলোচনা এখনো হয়নি। হয়তো ২৫ তারিখের দিকে উইকেট নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত হবে।’
অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সময় প্রায় প্রতি রাতেই বৃষ্টি হয়েছে মিরপুরে। উইকেটের মাটিও ছিল ভেজা। রোদ কম থাকায় উইকেট শুকানোর সুযোগ তেমন ছিল না। চাইলেও খুব ভালো ব্যাটিং উইকেট তৈরি সম্ভব ছিল না সে কারণে। তবে গত কয়েক দিনের আবহাওয়া ব্যাটসম্যানদের আশাবাদী করছে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই হাবিবুল বলছিলেন, ‘বৃষ্টি হলে উইকেটের নিচের অংশ ভেজা থাকে। শুকানোর সময় পায় না। মিরপুরের উইকেট শুকানোর জন্য প্রচুর রোদ দরকার হয়। বৃষ্টি না থাকলে এই সমস্যা হয় না। নভেম্বর-ডিসেম্বরে উইকেট ভালো থাকে, কারণ তখন বৃষ্টি থাকে না।’
বৃষ্টি না হলে নিউজিল্যান্ড সিরিজটা অস্ট্রেলিয়া সিরিজের মতো অল্প রানের হবে না, এই আশা তাই করাই যায়। তার ওপর সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিউজিল্যান্ড সিরিজই বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের সর্বশেষ সিরিজ। বিশ্বকাপের আগে ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস অর্জনের সর্বশেষ সুযোগও। জাতীয় দলের এক ব্যাটসম্যান কাল বলছিলেন, ‘বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংয়েও ছন্দে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কন্ডিশনে ব্যাটিংয়ে ছন্দ ধরতে পারাটা কঠিন। বিশ্বকাপের আগে যদি দলের বেশির ভাগ ব্যাটসম্যান সেটা ধরতে পারে তাহলে দলের জন্য ভালো হবে।’
কিন্তু আধুনিক ক্রিকেটের সংস্কৃতিই এটা হয়ে গেছে যে উইকেট হবে স্বাগতিক দলের সুবিধা দেখে। তারা যেন ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগাতে পারে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে সেটাই করেছে বাংলাদেশ দল এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও তাই হওয়ার সম্ভাবনা। উইকেট–ধাঁধার মধ্যে পড়তে হবে তাদেরও। কিউইদের বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টি জয়ের সুযোগ কেন নিতে চাইবে না মাহমুদউল্লাহর দল
তা ছাড়া এই সিরিজের পর ২০২৩ সাল পর্যন্ত সফর পরিকল্পনায় (এফটিপি) নিউজিল্যান্ডের মতো বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নেই বাংলাদেশের। বড় দলকে হারিয়ে র্যাঙ্কিংয়ে বড় লাফ দেওয়ার এটাই সুযোগ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানের সিরিজ জয়ও বাংলাদেশকে র্যাঙ্কিংয়ের ১০ নম্বর থেকে নিয়ে আসবে ৬ নম্বরে। আর ফলাফলটা যদি ৪-১ কিংবা ৫-০ হয়, তাহলে উঠবে ৫ নম্বরে। সে ক্ষেত্রে ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার পথটাও সুগম হবে বাংলাদেশের।
মুশফিকরা যতই সবুজ উইকেটে অনুশীলন করুন না কেন, দ্বিতীয় সারির নিউজিল্যান্ডকে হারাতে যে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সব রকম আয়োজনই থাকবে; সেটি এখনই বলে দেওয়া যায়।