আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে চীনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি অনানুষ্ঠানিক স্বাধীন ট্রাইব্যুনালের রায়ে দেশটিকে অভিযুক্ত করা হয়। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আলজাজিরা।
বৃহস্পতিবার দেওয়া উইঘুর ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নিধন ও নিপীড়ন চালানোর মানসিকতা থেকেই চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর জন্ম নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য বাধ্যতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ চাপিয়ে দিচ্ছে। চীনা কর্তৃপক্ষের এমন পদক্ষেপকে কার্যত গণহত্যা হিসেবেই উল্লেখ করেছে ট্রাইব্যুনাল।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনানুষ্ঠানিক এই ট্রাইব্যুনাল বলছে, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের টার্গেট করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না ঘটলেও মূলত উইঘুর মুসলিমরা যেন তাদের জনসংখ্যা বাড়াতে না পারে সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে বেইজিং।
উইঘুর ট্রাইব্যুনালের প্রধান এবং মানবাধিকার বিষয়ক প্রখ্যাত আইনজীবী স্যার জিওফ্রে নাইস বলেছেন, উইঘুর মুসলিম সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যা কমাতে চীনা সরকার তাদের ওপর জন্ম নিয়ন্ত্রণসহ বাধ্যতামূলক নানা পদক্ষেপ চাপিয়ে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালের সবাই প্রশ্নাতীত ভাবেই এ বিষয়ে একমত হয়েছে যে, নানা অমানবিক পদক্ষেপের মাধ্যমে চীনা সরকার উইঘুর মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে।
তার ভাষায়, ‘চীনা সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা বা অনুমোদন না পেলে উইঘুর মুসলিমদের ওপর এ ধরনের ব্যাপক দমনপীড়ন চালানো সম্ভব নয়।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই প্রতীকী ট্রাইব্যুনাল মূলত আইনজীবী এবং শিক্ষাবিদদের নিয়ে গঠন করা হয়। যদিও ট্রাইব্যুনালের রায়টি কেবল ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, কোনো আইনি শক্তি নেই। ট্রাইব্যুনালটি সরকার কতৃক স্বীকৃত নয় এবং এটি কার্যত চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বা শাস্তিমূলক কোনো নির্দেশনাও দিতে পারবে না।আইনি স্বীকৃতি না থাকলেও এই ট্রাইব্যুনালের রায়ের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব রয়েছে। কারণ উইঘুর ট্রাইব্যুনালের প্রধান স্যার জিওফ্রে নাইস ইতোপূর্বে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সাবেক সার্বিয়ান প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিকের বিচারকার্যেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
এর আগে গত মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতিবেদনে জিনজিয়াংয়ে চীনা নিপীড়নের ব্যাপারে বলা হয়, গত বছর উইঘুর ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে চীনের ক্ষমতাসীন সরকার।
মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো হলো— যথেচ্ছভাবে তাদের আটক ও বন্দিশিবিরে পাঠানো, জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন, শ্রমদানে বাধ্য করা এবং ধর্মপালন, মতপ্রকাশ ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জিনজিয়াং প্রদেশে চীন প্রায় ১০ লাখ উইঘুর মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের আটকে রেখেছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা। এছাড়া চীনের মূলধারার হান জনগোষ্ঠীকে জিনজিয়াংয়ের কিছু এলাকায় বসবাসের জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া উইঘুর শিশুদের তাদের পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অবশ্য চীনা প্রশাসন বরাবরই উইঘুরদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ অযৌক্তিক, হাস্যকর এবং ডাহা মিথ্যা বলে দাবি করে থাকে। অন্যদিকে জিনজিয়াংয়ের বন্দিশিবিরগুলোতে ১০ লাখ সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম থাকার অভিযোগ উঠলেও চীনের দাবি, উগ্রবাদ দূর করতে সেখানে উইঘুর জাতিগোষ্ঠীর এসব মানুষকে কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
বিএসডি /আইপি