আন্তর্জাতিক ডেস্ক,
প্রতিবেশি উজবেকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষিত আফগান পাইলট এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যে তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হলে তালেবানের যোদ্ধারা তাদের মেরে ফেলতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।
উজবেকিস্তানের একটি শিবিরে আশ্রয় নেওয়া পাইলটরা ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, একদিন একজন উজবেক গার্ড শিবিরে এসে তাদের বলেন, আপনারা এখানে চিরকাল থাকতে পারবেন না। তার এই সতর্কবার্তার পর শিবিরে আশ্রয় নেওয়া পাইলটদের মধ্যে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের পর গত আগস্টে তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের পতনের পর ওই পাইলটরা বিমানসহ উজবেকিস্তানে পালিয়ে যান। উজবেকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী তাদেরও সরিয়ে নেবে এমন প্রত্যাশায় তিন সপ্তাহ ধরে ক্ষণগণনা করলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
শাস্তির আশঙ্কায় একজন পাইলট নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘তারা যদি আমাদের ফেরত পাঠিয়ে দেন, তাহলে আমি শতভাগ নিশ্চিত যে, তারা (তালেবান) আমাদের মেরে ফেলবে।’
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে টেলিফোনে তিনি বলেন, শিবিরে আশ্রিত আফগানদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে না। নিজেদের বন্দির মতো মনে হচ্ছে বলে জানান ওই পাইলট। তিনি বলেন, আমাদের চলাফেরা অত্যন্ত সীমিত করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় রোদে কাটাতে হয়, পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার ও ওষুধ নেই। কারও কারও ওজন কমে গেছে।
ওই শিবিরে অন্তত ৪৬৫ আফগান পাইলট আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীর পলাতক ওই পাইলট বলেন, ‘আমরা এখানে কারাবন্দির মতো আছি। এখানে আমাদের কোনও স্বাধীনতা নেই।’
আগস্টের শেষের দিকে উজবেকিস্তানের ওই শিবিরের স্যাটেলাইট চিত্র পায় রয়টার্স। এতে দেখা যায়, তারমেজ শহরের কাছের ওই শিবিরের চারপাশে উচু প্রাচীর। অতীতে এই শিবির করোনাভাইরাসের রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়েছিল।
উজবেক সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষীরা ওই শিবিরে মোতায়েন রয়েছেন। তাদের কারও কারও হাতে বন্দুক এবং আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রও আছে বলে জানিয়েছেন ওই পাইলট।
তালেবানের চাপ
কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠী তালেবানের ক্ষমতা দখল এবং আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দশকের যুদ্ধের অবসানের পর আফগান ওই পাইলটরা উজবেকিস্তানে পালিয়ে যান। সেখানে যে শিবিরে এই পাইলটদের রাখা হয়েছে তা নিয়ে আরেকটি সঙ্কটের মুখে পড়তে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সৈন্য, মার্কিন নাগরিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ আফগানদের সরিয়ে নেওয়ার বিশাল কর্মযজ্ঞ নিয়ে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাম ও ডানপন্থীদের সমালোচনায় রয়েছেন তিনি।
উজবেকিস্তানে মার্কিন বিমান এবং আফগান কর্মকর্তাতের সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সমালোচনা করেছেন দেশটির বর্তমান ও সাবেক অনেক কর্মকর্তা। তারা ওই পাইলটদের হস্তান্তরে উজবেকিস্তানের ওপর তালেবান চাপ প্রয়োগ করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।
মার্কিন সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির ডেমোক্র্যাট দলীয় চেয়ারম্যান সিনেটর জ্যাক রিড বলেছেন, তিনি উজবেকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া আফগান পাইলট এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপারে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।
উজবেকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জন হার্বস্ট বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, ওই পাইলট এবং সৈন্যদের হস্তান্তরে তালেবানের কাছ থেকে প্রকৃত এবং যথেষ্ট চাপের মুখোমুখি হয়েছে উজবেকিস্তান।
বিএসডি/এএ