নিজস্ব প্রতিবেদক:
অন্তত শেষটা ভালো করার প্রত্যয় ছিল বাংলাদেশের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম ইনিংস বলছে, সেটাও হচ্ছে না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের। শুরু থেকে শেষতক ছন্নছাড়া ব্যাটিং, তাতে দল গুটিয়ে গেল মাত্র ৮৪ রানেই।
প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকল ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ। প্রথম বলেই আউট হয়েছিলেন সৌম্য সরকার ও আফিফ হোসেন। নাসুম আহমেদ হলেন হিট উইকেট। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যেন ছাড়িয়ে গেলেন তাদের সবাইকে। তার আঙ্গুলে বল লাগল, তিনি কি না বলতেই পারলেন না! নিয়ে নিলেন রিভিউ। সেটি বাতিল হয়েছে তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে।
কার্যত শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ যাত্রা। সুপার টুয়েলভ পর্বে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচ হেরে ভেস্তে গেসে সেমিফাইনালের স্বপ্ন। আশা যেটুকু আছে তার পুরোটাই কাগজকলমে। বাস্তবিক অর্থে যার ভিত্তি নেই বললেই চলে। যারা কঠোরভাবে বিশ্বাস করেন, ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তা খেলা- সেসব সমর্থকরাই এখনো ‘ঠুনকো’ বিশ্বাসে বুক বেধে আছেন।
তবে এতসব সমীকরণ মেলাতে যে কাজটি সবার আগে করতে হবে, আজ (মঙ্গলবার) দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটি জিততেই হবে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এ ম্যাচটি জিতলে তবেই জিইয়ে থাকবে সমীকরণের হিসাব। হারলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম দল হিসেবে সুপার টুয়েলভ থেকে বিদায় নেবে টাইগাররা। স্বপ্ন কোনরকম বাঁচিয়ে রাখতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে ৮৪ রানের পুঁজি বাংলাদেশের।
ইনজুরির কারণে সাকিব আল হাসান আগেই ছিটকে গেছেন। এজন্য তাকে ছাড়াই আজ মাঠে নামে বাংলাদেশ দল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই প্রথমবার সাকিবকে ছাড়া মাঠে নামে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে আগের সবগুলো ম্যাচেই ছিলেন এই অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে টানা ৩১ ম্যাচ খেলার পর ছেদ পড়ল এই ধারায়। সঙ্গে এ ম্যাচে একাদশের বাইরে পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। সাকিবের জায়গায় অভিষেক হয় শামীম পাটোয়ারির। মুস্তাফিজের পরিবর্তে একাদশে নাসুম।
জিততেই হবে এমন সমীকরণ নিয়ে মাঠে নেমে টস ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি লাল-সবুজের দলপতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। টেম্বা বাভুমা উইকেট পড়তে ভুল করেননি। আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানালেন বাংলাদেশ দলকে। অধিনায়কের আস্থার মান রাখলেন দক্ষিণ আফ্রিকান বোলাররা। পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারেই লণ্ডভণ্ড টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপ। কাগিসো রাবাদা একাই তুলে নিলেন ৩ উইকেট। ৬ ওভারে আসে ২৮ রান।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে শেষ দুই বলে জোড়া আঘাতে ওপেনার নাঈম শেখ ও তিনে নামা সৌম্য সরকারকে ফেরান রাবাদা। তার লেংথ বল পুল করার চেষ্টা করেন নাঈম। কাল হলো সেটিই। ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ গেল মিড উইকেটে রেজা হেনড্রিকসের কাছে। ১১ বলে ৯ রান করে আউট নাঈম। এর পরেই বলেই বাঁহাতি সৌম্যকে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে চমকে দেন রাবাদা। শেষ মুহূর্তে একটু সুইং করে বলটি ছোবল দেয় সৌম্যর প্যাডে। রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় সৌম্যর।
হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগালেও হ্যাটট্রিক করতে পারেননি রাবাদা। রাবাদার হ্যাটট্রিক কোনরকমভাবে আটকাতে পারলেও শেষরক্ষা হয়নি মুশফিকুর রহিমের। প্রথম বলে বেঁচে গেলেও তৃতীয় বলে রক্ষা পেলেন না মুশফিকুর রহিম। অফ স্টাম্পের বাইরে রাবাদার গতিময় ডেলিভারিটি লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠে অনেকটা। মুশফিকের বাড়িয়ে দেওয়া ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় গালির দিকে। লুফে নেন হ্যানড্রিকস। ৩ বলে কোন রানে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক।
রাবাদার ৩ ওভারের বিধ্বংসী স্পেলের পর দৃশ্যপটে আনরিখ নখিয়া ও ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস। ২৪ রানে ৩ উইকেট যাওয়ার পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করতে পারলেন না। প্রোটিয়া পেসার নখিয়ার বাউন্স মাহমুদউল্লাহর গ্লাভস ছুঁয়ে মার্করামের হাতে ধরা পড়ে। মাহমুদউল্লাহ ৩ রান করে আউট হলে ক্রিজে নেমে প্রিটোরিয়াসের প্রথম বলেই বোল্ড আফিফ হোসেন। ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে এসে খেলতে যান, টাইমিং হয়নি। ভেঙে যায় স্টাম্প। তিনিও ফেরেন কোন রান না করে।
সতীর্থদের আসাযাওয়া ভিড়ে একপ্রান্ত ধরে রেখেছিলেন ওপেনার লিটন দাস। তবে ব্যর্থতা মিছিলে নিজেও নাম না তুলে পারলেন না। শামসির বলে লেগ বিফোর হয়ে ফেরেন ২৪ রান করে। ৩৬ বলে ইনিংসে বাউন্ডারি মাত্র ১টি। এতে স্কোর ৪৫ রান ছুতেই ৬ উইকেট নেই বাংলাদেশ দলের। পঞ্চম উইকেটে ১৯ রানের পার্টনারশিপ শামীম-শেখ মেহেদী হাসানের। শামসির দ্বিতীয় শিকার হয়ে শামীম ১১ রানে ফিরলে ভাঙে এই জুটিও।
অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে তাসকিন রান আউট হন ৩ রান করে। ধ্বংস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়েও খানিক সাবলীল ব্যাটিং করেন শেষ মেহেদী। তার ২৫ বলে ২৭ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভারের আগে অলআউট হয় বাংলাদেশ দল। তার আগে স্কোরবোর্ডে ৮৪ রানের পুঁজি পেয়েছে টাইগাররা। যেখানে সব মিলিয়ে ইনিংসের বাউন্ডারি- ৪টি চার ও ১টি মাত্র ছয়ের মার।
বিএসডি / আইকে