অনলাইন ডেস্ক:
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) আগমনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে শান্তির বানী প্রচার হতে শুরু করেন। আইয়েমে জাহিলিয়াতের যুগ ধ্বংস হয়ে সৃষ্টি হয় মানবতার যুগ। যেখানে কোন হিংসা, বিদ্ধেশ, হানাহানী ও মারামারি নেই। পৃথিবীতে নেমে আসে এক শান্তির ছায়া। ধীরে ধীরে এই শান্তির বানী সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। ইসলামের এই বিকাশের সাথে সাথে আমাদের এই উপমহাদেশেও প্রচুর সূফী সাধকের আগমন ঘটে।
নিজেদের আস্তানা এবং নামাজের জন্য তারা মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের এই ভূখণ্ডে প্রচুর মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। আমাদের এই ভূখণ্ডে তেমনি কিছু বিখ্যাত মসজিদ ষাট গম্বুজ মসজিদ। যা বাগেরহাটে নির্মাণ করেন সূফী খান জাহান আলী, বাবা আদম মসজিদ যা মুন্সিগঞ্জ জেলায় বাবা আদম (র.) নির্মাণ করেন, বাঘা মসজিদ, লাল দিঘি মসজিদ, খানিয়া দিঘিসহ আরও অসংখ্য মসজিদ তারা নির্মাণ করেন।
সেই সকল মসজিদগুলো তখনকার দিনে শুধুমাত্র নামাজই ছিল না বরং প্রাচীন শিক্ষা কেন্দ্রও ছিল। তখনকার দিনে মসজিদে সমাজের বিভিন্ন বিচার কার্য সম্পাদন করা হতো। সেসময় আমাদের এই ভূখণ্ডে প্রচুর মসজিদ নির্মাণ শুরু হয়। অনেক মসজিদগুলোর সঠিক ইতিহাস এখন পর্যন্ত অজানা। তেমনি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম মসজিদ জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানীতে অবস্থিত।
যা স্থানীয়ভাবে চিকাজানী প্রাচীন মসজিদ নামেই পরিচিত। আবার কেউ কেউ এই মসজিদটিকে আজগবি মসজিদ নামেও চিনে থাকেন। অনেকেই ধারনা করেন এই মসজিদটি মাটির নিচ থেকে অলৌকিক ভাবে গড়ে উঠছে। এক সময় মসজিদে ফার্সি কিতাবের প্রচলন ছিল। তাই অনেকেরই ধারণা ফার্সি শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে মসজিদটি ব্যবহৃত হত।
ধারণা করা হয়, খাঁন জাহান আলী (রহ.) এর অনুসারীরা ১৫০০ শতাব্দীর শেষের দিক এই অঞ্চলে ধর্ম প্রচারের জন্য আগমন করেন। সে সময়ে তারা খরস্রোতা চন্দ্রা নদীর চন্দনপুরা ঘাটে বসতি স্থাপন করেন। তারা খাঁন জাহান আলী (রহ.) মাজারের নকশার আদলে মসজিদটি স্থাপন করেন।
চিকাজানীর এই প্রাচীন মসজিদ সম্পর্কে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধা তারেক জানান, রাজখুরিয়া গেন্দা নামে এই অঞ্চলে একজন ভূস্বামী ছিলেন। তিনি একজন মুসলিম সাধক ফকিরের আধ্যাত্নিকতায় মুগ্ধ হয়ে সপরিবারে ইসলাম গ্রহণ করেন।
ইসলাম ধর্মের প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্যের জন্য আশেপাশে ৩০ বিঘা জমি নিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। তার সিদ্ধান্তের প্রতিচ্ছবি হচ্ছে আজকের এই মসজিদ। মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থিত কবর রয়েছে। কবর দু’টি যথাক্রমে তার ছেলে শেখ জালাল এবং শেখ ফরিদের।
তিনি আরও বলেন, প্রাচীন কাল হতে মসজিদের চারপাশে ৮ জন অলির কবরস্থান রয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র একজনের কবর চিহ্নিত করা গেলেও বাকিদের কবর চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। যারা অনেক উঁচু মাপের ইসলামের আলেম এবং সাধক ছিলেন। কালের বর্তমানে হারিয়ে গেছে তাদের কবর এবং তাদের কর্ম পরিচয়।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা যায়, মসজিদটি নির্মাণে বর্গাকৃতির ইট, চুন ও সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। নির্মাণের বয়স আনুমানিক ৫০০ বছর। এতো দীর্ঘ বছর মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকার রহস্য আজো অজানাই রয়েছে। মসজিদের বাইরের দিকটি দেখতে বড় মনে হলেও ভিতর দিকটা একেবারেই সংকীর্ণ।
বর্তমানে মসজিদে যায়গার স্বল্পতা দেখা দেয়। যার প্রেক্ষিতেই স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় পাশেই তিন তলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয়দের মাঝে প্রচলিত রয়েছে অজগবী/গায়েবী মসজিদ নামে। তাদের অনেকেরই ধারণা এই মসজিদটি মাটির নিচ থেকে হঠাৎ রাতের আঁধারে স্থাপন হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন এটি তৎকালীন সময়ে নবাবদের পারিবারিক প্রার্থনাস্থল ছিল। কালের বিবর্তনে তারা চলে গেলেও রয়ে যায় স্থাপনাটি।
প্রাচীন এই পবিত্র মসজিদ বাংলাদেশে ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। যা বাংলাদেশের অনেক পুরাতন মসজিদের একটি।
কিভাবে যাবেন: রেলপথে খুব সহজেই যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র অথবা দেওয়ানগঞ্জ গামী কমিউটার ট্রেনে দেওয়ানগঞ্জ বাজার । এরপর ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ধরে চিকাজানী প্রাচীন মসজিদ। সড়ক পথে ঢাকা মহাখালী বাস ট্রার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ-জামালপুর হয়ে সরাসরি দেওয়ানগঞ্জ বাস স্টপে। তারপর রিকশা অথবা ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ধরে চিকাজানী প্রাচীন মসজিদ।
বিএসডি/আইপি