আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দীর্ঘ প্রায় একমাস কান্দাহারে থাকার পর অবশেষে কাবুলে ফিরে এসেছেন আফগানিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও দেশটিতে ক্ষমতাসীন তালেবানগোষ্ঠীর অন্যতম শীর্ষ নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার।
বুধবার গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে করা এক প্রতিবেদেন ভারতের জাতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, মঙ্গলবার কাবুলে ফিরেছেন বারাদার এবং বর্তমানে তিনি কাবুলের রাষ্ট্রপতির আবাসিক ভবন ও কার্যালয় প্রেসিডেন্ট প্যালেসে অবস্থান করছেন।
আফগানিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অধিকারী মোল্লা বারাদার। মঙ্গলবার কাবুলে এসে পৌঁছানোর পর আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তালেবান নেতা সিরাজউদ্দিন হাক্কানি, বারাদারের নিরাপত্তার জন্য সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পাঠিয়েছিল।
কিন্তু সেই সদস্যদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আফগান উপপ্রধানমন্ত্রী। জানিয়েছেন, তার নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছে, সরকারি নিরাপত্তার কোনো প্রয়োজন তিনি বোধ করছেন না।
তালেবানগোষ্ঠীর একাংশের নেতাদের সঙ্গে বিরোধ চলছে মোল্লা বারাদারের। এই বিরোধের শুরু গত গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে, যখন আফগানিস্তানে নতুন মন্ত্রীসভা গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তালেবান বাহিনী।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি বছর এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণার একমাস পর থেকে আফগানিস্তান দখলের অভিযান শুরু করে তালেবানবাহিনী এবং মাত্র তিন মাসের মধ্যে দেশের প্রায় সবগুলো প্রদেশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার পর গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখল করে তালেবান।
রাজধানী দখলের দু’সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়ার পর নতুন মন্ত্রীসভা গঠনের প্রস্তুতি শুরু করে তালেবানগোষ্ঠী। গত ১০ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে তালেবান শীর্ষ নেতারা বৈঠকে মিলিত হন কাবুলের প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে।
সেই বৈঠকেই সূত্রপাত হয় দ্বন্দ্বের। তালেবান নেতাদের একাংশ ওই বৈঠকে যে মন্ত্রীসভার প্রস্তাব করেন, তার বিরোধিতা করেছিলেন মোল্লা বারাদার ও তার অনুগত তালেবান নেতা-কর্মীরা। বারাদার অন্তর্ভূক্তিমূলক সরকারগঠনের পক্ষে ছিলেন, যে সরকারে আফগানিস্তানের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীসমূহের প্রতিনিধি ও তালেবান নন- এমন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীসমূহের নেতাদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
বৈঠকে এই নিয়ে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে আফগানিস্তানের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হাক্কানির আত্মীয় ও তালেবানগোষ্ঠীর সহযোগী গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা খলিলুর রহমান হাক্কানি নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান এবং বারাদারের কাছে ছুটে গিয়ে তাকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন।
পরে এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন এই দুই নেতার অনুসারী যোদ্ধারাও। কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্যালেসে ওইদিন বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চলেছে বলে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
এই ঘটনার পরই কাবুল ত্যাগ করে তালেবানের মূল ঘাঁটি কান্দাহারে ফিরে যান মোল্লা বারাদার। তার সঙ্গে যোগ দেন আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব।
তালেবান বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মোল্লা বারাদার ২০২০ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় শুরু হওয়া শান্তি সংলাপে তালেবান প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই সংলাপেই অন্তর্ভূক্তিমূলক সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালেবান।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, তালেবানগোষ্ঠীতে এখন দু’টি উপদল তৈরি হচ্ছে। একটির নেতৃত্বে আছেন মোল্লা বারাদার, যারা তালেবানের মূল আদর্শ আকড়ে রাখতে ইচ্ছুক, অন্যদিকে আছে হাক্কানি পরিবার, যাদের সঙ্গে আইএসের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মোল্লা বারাদার কাবুলে ফিরলেও মোহাম্মদ ইয়াকুব এখনও কান্দাহারেই আছেন।