ওয়াহিদ তাওসিফ মুছা
সন্তান ধারণের আগে ও পরে কখন কী করতে হবে এ ব্যাপারে আমাদের দেশের মায়েরা খুব একটা সচেতন নয়। অথচ সীমাবদ্ধ স্বাস্থ্য সেবার মাঝে একটু আগ্রহী হলেই মায়েরা সফলভাবে সন্তান জন্ম দিতে পারেন। করোনাকালীন এ সময়ে গর্ভবতী মায়েদের করণীয়, বর্জনীয়সহ নানা প্রশ্ন নিয়ে ‘বর্তমান সময়ের’ সাথে কথা বলেছেন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ এবং সহযোগী অধ্যাপক ডা.মিজানুর রহমান কল্লোল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওয়াহিদ তাওসিফ মুছা।
বর্তমান সময় : গর্ভবতী মায়েদের প্রাথমিক অবস্থায় কি করণীয়?
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল: একজন মহিলা সন্তান ধারণের উপযুক্ত কিনা সেটা আগেই একজন ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। উপযুক্ত হলে তিনি সন্তান নেবেন এবং প্রথম ঋতুস্রাব বন্ধের পরই স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নেবেন। গর্ভবতী মায়েদের কিছু প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন- শরীরটা একটু দুর্বল বোধ হওয়া,খাবারে অরুচি, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, বমি বমি ভাব ইত্যাদি। প্রথমবার ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি গর্ভধারণটা নিশ্চিত হওয়ার পর মায়ের শারীরিক পরীক্ষা করবেন এবং রক্ত ও প্রস্রাবের কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাবেন।
বর্তমান সময় : গর্ভবতী মায়েদের কোন ধরণের খাবার গ্রহণ করতে হবে?
ডা.মিজানুর রহমান কল্লোল: খাবার প্রসঙ্গে প্রথমেই মনে রাখতে হবে গর্ভবতী মায়েদের খাবারের চাহিদা বেশি। কারণ মাকেই গর্ভস্থ ভ্রূণের বেড়ে ওঠার চাহিদা মিটাতে হয়। সুতরাং মায়েরা যেসব খাবার খান সেটাই বেশি খেয়াল রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে খাবার তালিকায় যেন শাকসবজি, সহজলভ্য ফল, সম্ভব হলে ডিম, দুধ, ছোট মাছ ইত্যাদি থাকে। এখানে উল্লেখ্য, গর্ভবস্থায় শরীরে ক্যালসিয়াম ও আয়রনের চাহিদা বেড়ে যায়; যা ভালো খাবারেও পূরণ হয় না। সুতরাং ডাক্তার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনাকে ওষুধ হিসেবে এ দুটি উপাদান খেতে দিতে পারেন।
বর্তমান সময়: স্বাস্থ্য পরিচর্যা সম্পর্কে গর্ভবতী মায়েদের কি করণীয় আছে?
ডা.মিজানুর রহমান কল্লোল: স্বাস্থ্য পরিচর্যা সম্পর্কে বলতে হলে -এ সময়টাতে প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের বেশি বিশ্রাম নিতে হবে। বিশেষ করে দুপুরে খাবার পর একটু বিশ্রামে থাকবে। সংসারে স্বাভাবিক কাজ-কর্ম চালিয়ে যাবে, তবে প্রথম ও শেষ দিকটাতে কঠিন পরিশ্রমের কাজ করা অনুচিত। কোষ্ঠকাঠিন্য কিছু কিছু মহিলাকে এ সময়ে বেশ কষ্ট দেয়। এর জন্য প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি খেতে হবে। প্রয়োজনে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন।
বর্তমান সময়: গর্ভবতী মায়েদের ভ্রমণে বিশেষ সতর্কতা রয়েছে কি?
ডা.মিজানুর রহমান কল্লোল: ভ্রমণ বা যাতায়াতের ব্যাপারে পরামর্শ হচ্ছে- বেশি ঝাঁকুনি লাগে এ রকম খারাপ রাস্তায় প্রথম ও শেষ দিকে যাতায়াত না করা ভালো। অনেক মহিলা সরু হিলের জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার করেন। বিশেষ করে শেষ দিকটাতে এমন জুতা না পরলে ভালো হয়। নিয়মিত দাঁতের পরিচর্যা করবেন এবং গোসল করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকবেন। এ সময়ে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের সৌভাগ্য ১৫ থেকে ৪৫ বছরে বয়স্ক সব মহিলাকেই ইপিআই কার্যক্রমের আওতায় ধনুষ্টঙ্কারের টিকা দেওয়া হয়। প্রত্যেক গর্ভবতী মাকে অবশ্যই স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করে সময়মত টিকা নিতে হবে।
বর্তমান সময়: গর্ভাবস্থায় একজন নারী কতবার ডাক্তারকে দিয়ে চেকাআপ করাবেন?
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল: আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অন্তত ৪ বার আপনার এ সুযোগ নেওয়া উচিত। প্রথম ৩ মাসে ১ বার, দ্বিতীয় ৩ মাসে একবার ও শেষ ৩ মাসে ২ বার চেকআপ করানো প্রয়োজন। এ সময়টাতে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনো কোন ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না। এতে গর্ভস্থ ভ্রুণের ক্ষতি হতে পারে। নিয়মিত চেকআপের সময় আপনার গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ কিনা সেটা ডাক্তার বলে দিবেন। ঝুঁকিপূর্ণ হলে অবশ্যই প্রসবের সময় হাসপাতালে থাকতে হবে৷
বর্তমান সময়: করোনাকালীন এ সময়ে গর্ভবতী মায়েরা ভ্যাকসিন নিতে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন ?
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল: করোনার এ সময়ে গর্ভবতী মায়েদের ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে অবশ্যই তার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে৷
বর্তমান সময়: ধন্যবাদ আপনাকে।
ডা.মিজানুর রহমান কল্লোল: আপনাকেও ধন্যবাদ।