ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল আযহা, যা ঈদুজ্জোহাও নামেও পরিচিত।মুসলিমদের এই ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশায় ত্যাগ ও উৎসর্গের মহীয়ান গাঁথার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তবে বৈশ্বিক সংকটকালীন সময়ে মানুষের জীবনযাপন নানা সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে, এমতাবস্থায় উৎসব পালনে মানুষ কতটা উৎসুক আর এ সময়ে কিভাবে তারা স্ব- স্থানে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন , কিভাবে কাটছে তাদের যাপিত সময়, ইদকে ঘিরে কি পরিকল্পনাই বা রয়েছে এমন নানা বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন দৈনিক বর্তমান সময়ের জবি প্রতিনিধি – শ্রেয়সী সিকদার।
নিজের ও পরিবারের যথাযথ নিরাপত্তার খেয়াল রাখছি –নিলয় আফরিন, বিবিএ(অনার্স), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
“ঈদ-উল আযহা” মুসলিম সম্প্রদায়ের ধনী গরীব সকলের জন্য আনন্দ বয়ে আনে,পরিপূর্ণ ধর্মীয় মর্যাদা ও যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সারা দেশে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ-উল আযহা উদযাপন করেন।
তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস গত দুবছর যাবত ঈদ আনন্দ ম্লানের অন্যতম কারণ। অন্যান্য সময়ের চেয়ে তুলনামূলকভাবে করোনার তৃতীয় ঢেউ কাবু করে ফেলছে দেশকে। করোনা মহামারি পরিস্থিতিতেই বন্যা বয়ে এনেছে দুর্ভোগ। এমতাবস্থায় ঈদে হয়তো পরিবারের কাছে ফিরতে পারবেন না অনেকেই। আয়োজন করে কেনাকাটা হবে না, ঘুরতে যাওয়া হবে না এবং মুখরোচক খাবারের আয়োজন কমে যেতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত নিজের ও পরিবারের যথাযথ নিরাপত্তার খেয়াল রাখা। নিজের পরিস্থিতি ও অবস্থান থেকে পরস্পরকে সাহায্য করা,স্বাস্থ্য-বিধি মেনে চলা। অযথা যে কোন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না করে; বিপদগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করা। অনলাইনের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। আমরা কেউ আশাহত না হই,ধৈর্য ধারন করি এবং পরস্পরের জন্য দোয়া করি। ইনশাআল্লাহ পৃথিবী সুস্থ হবে।
অবসাদগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে-মারজানা রহমান তানহা, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
ঈদুল আযহা মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি। প্রতি বছরই এটি বেশ আমেজ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হলেও এ বছর হয়তো আর আগের আমেজে ঈদ পালন করা হবেনা,করোনার এই দুঃসময়ে কারোরই মন মানসিকতা ভালো নেই,সবার মনে আতঙ্ক।
প্রতিদিনই আমরা হারাচ্ছি চেনা অচেনা শত মানুষ কে,করোনা সংক্রমণ কমানোর উদ্দেশ্যে দফায় দফায় বেশ কয়েকবার লকডাউন দেয়ার কারণে অনেক পরিবারই আর্থিক সমস্যায় পড়েছে। এই খারাপ সময়ে ঈদের আনন্দ হয়তো স্পর্শই করবে না এই পরিবার গুলোকে। কুরবানি পশুর হাট ঘিরেও প্রচুর উৎসাহ দেখা যেত সবার মধ্যে। ঈদের সাতদিন আগে থেকেই শোনা যেত ‘বিশাল গরু ছাগলের হাট’ বলে মাইকিং হচ্ছে। কিন্তু এবার তো হাট প্রতিবারের মতো বিশাল আকারে না হয়ে সল্প পরিসরে হচ্ছে। সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে আত্মীয় স্বজনের বাসায় ও যাওয়া হচ্ছেনা। বাসায় বসে থাকতে থাকতে এবং চারিদিকের এই হাহাকার দেখে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে মানুষ। অবসাদগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আমাদের হাসি আনন্দ আর ঈদের আমেজ,সবই ছিনিয়ে নিচ্ছে করোনা।
পৃথিবীর সুস্থতার কামনা করি। আবারও সবাই মিলে আনন্দের সাথে ঈদ উদযাপন করতে চাই।
অনিবার্য দূরত্ব মেনে পালন করবেন এবারের ঈদ-সৈয়দা তাসফিয়া, আইন বিভাগ,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
ইসলাম ধর্মের সব থেকে পবিত্র উৎসব গুলির মধ্যে একটি হলো ঈদুল আযহা, ত্যাগ ও উৎসর্গের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ তা’য়ালার নৈকট্য লাভ করাই ঈদ-উল আযহা বা কুরবানীর উদ্দেশ্য।
করোনাকালীন এই সময়ে স্বাভাবিক কারণেই ঈদের চিরচেনা রূপ কিছুটা ভিন্ন।
আনন্দ, দুঃখ, কষ্ট, আতংক, অনিশ্চয়তা সব কিছু মিলিয়ে অপরিচিত এক ঈদ উদযাপন করতে চলেছি আমরা। অনেকেই বাড়ি-ঘর, পরিবার-পরিজন ছেড়ে আবার কাছাকাছি থেকেও এক অনিবার্য দূরত্ব মেনে পালন করবেন এবারের ঈদ। ঈদের সার্বজনীন চরিত্র হারানোর এই অভিজ্ঞতা আমাদের কাছে নতুন।
ঈদ মানেই খুশি,ফিরে আসুক ঈদের চিরচেনা আনন্দের রূপ। সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ভালোবাসা দিয়ে জড়িয়ে থাকুক সারাবছর, সকলের জীবন। অচেনা এই ভিন্ন ঈদে এটাই হোক প্রার্থনা ।
ঈদ মানে সব ব্যস্ততাকে ভুলে গিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা,-সুরাইয়া জেবিন পাপিয়া, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুই ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয়টি হলো “ঈদুল আযহা”।জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ই জিলহজ্ব দুপুর পর্যন্ত মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে প্রাণী জবাই করা হয়।ঈদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আত্মোৎসর্গ, নিজের ভেতরে থাকা পশুত্বের মূলতপাটন এবং একমাত্র রবের সন্তুষ্টি।
আমার কাছে ঈদ মানে সব ব্যস্ততাকে ভুলে গিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা,নতুন জামা কেনা,নানুবাড়ি যাওয়া,প্রচুর খাওয়া-দাওয়া করা, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে হুল্লোড়ে মেতে ওঠা,পাশাপাশি ত্যাগের মাধ্যমে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা এবং প্রশান্ত করা।ঈদে বাড়ি ফেরাতেই যেন ঈদের আনন্দের অনেকখানি জুড়ে।কিন্তু বর্তমানে আমরা প্রকটভাবে মহামারীর মধ্য দিয়ে যাচ্ছি,এই সংকট ঈদের আনন্দেও প্রভাব ফেলছে তীব্রভাবে।কারণ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখন অর্থনৈতিক ভাবে প্রতিকূলতার মুখোমুখি। এই অবস্থায় কুরবানি করা অনেকের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছ।তাছাড়া পশু কেনা,ঈদের নামাজ আদায়,কুরবানি করা,আত্মীয় স্বজনের বাড়ি যাওয়াসহ ঈদের সকল আনুষ্ঠানিকতাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে।এই সংকটকালীন ঈদে নিজেদের আনন্দ করার পাশাপাশি আমরা যেন করোনার এই দুর্যোগে অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করি। দান সদাকাহ এবং সহযোগিতার পরিমাণ বাড়াতে চেষ্টা করি। সকলের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই,ঈদের খুশির পাশাপাশি ঈদের শিক্ষা এমন মহত্ত্বের লালনের প্রতি গুরুত্ব দেই।ঈদের পবিত্র দিনের মহান আল্লাহ তা’আলা নিকট প্রার্থনা রইল যাতে তিনি বিশ্বের সংকট নিরসন করেন।
ঈদ উদযাপন এই করোনা পরিস্থিতির কারণে নানাভাবে ভেটো পড়ে।নানা অপ্রীতিকর সংকটের মাঝে আমরা পর্যবসিত।এমতাবস্থায় সকলে সাবধানতার সাথে স্বস্থানে প্রিয়জনদের নিয়ে ঈদ আনন্দে সামিল হই,নিজের পাশাপাশি দীনদুঃখী মানুষদের সামনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই,একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সকলকে বৈশ্বিক সংকটকালীন সময়ে সচেতন করি এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করি।