নিজস্ব প্রতিবেদক,
অবশেষে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
২০১৯-২০ অর্থবছরে জুন-জুলাই মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।
মূলত এক দশক ধরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ধারাবাহিকভাবে সেবা ও কৃষি খাতের অবদান কমছে। গত এক দশকে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। আর সেবা খাতের অবদান কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ।
তবে জিডিপিতে বেড়েছে শিল্প খাতের অবদান, প্রায় ৮ শতাংশ। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন কৃষি খাতের অবদান প্রবৃদ্ধিতে বেড়েছে, কমেছে সেবা ও শিল্পখাতের অবদান।
বৃহস্পতিবার (০৫ আগস্ট) বিবিএস থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা গেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
বিবিএস মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার প্রকাশ করেছি। প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। আমরা সবাই জানি সব খাতেই করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মূলত জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে।
বিবিএস প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চূড়ান্তভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষিখাতে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত বছরে যা ছিল ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ফলে করোনা সংকটেও অর্থনীতির চাকা সচল ছিল কৃষিখাতে। করোনা সংকটের মধ্যে দেশকে মূলত বাঁচিয়ে রেখেছিল কৃষিখাত। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ০২ শতাংশ। খাদ্য শষ্য, প্রাণিজ ও বনজ সম্পদ আহরণ ঠিক ছিল করোনা সংকটেও। কৃষির উপখাতে মৎস্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধির ধস দেখা গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ, অথচ গত অর্থবছরে যা ছিল ১৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ফলে বিবিএস প্রতিবেদনে উঠে এসেছে করোনার বড় ধাক্কা লেগেছে শিল্পখাতে।
সেবাখাতেও বড় ধাক্কা লেগেছে প্রবৃদ্ধিতে। এই খাতে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রবৃদ্ধি কমলো, এতে অবাক হওয়ার কারণ নেই। কারণ আমরা সবাই জানি করোনার কারণে প্রবৃদ্ধি কমলো। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হিসাব প্রশ্নবিদ্ধ ছিল বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল ছিল না। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাবটাও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন চূড়ান্ত হিসেবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, বলা যায় এটা বাস্তবতার কাছাকাছি। আমার মনে হয়েছে করোনাকালীন সময়ে যেখানে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত ছিল সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির এই অর্জন সত্যিই প্রসংশনীয়। এই জন্য সঠিক তথ্য তুলে ধরায় পরিকল্পনামন্ত্রী ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রকাশ নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি প্রকাশ করেছি। প্রবৃদ্ধি অনেক কমেছে, এটা লুকানোর কিছু নয়। সঠিক চিত্র না এলে দেশের সঠিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বিএসডি/আইপি