করোনার কারণে দেশের অন্যান্য খাতের মতো বিপাকে পড়েছে হজ এজেন্সিগুলোও। পরপর দুই বছর সৌদি আরবে হজ যাত্রীরা যেতে না পারায় ইতোমধ্যে ২ শতাধিক এজেন্সি বন্ধ হয়ে গেছে। আরও বন্ধ হওয়ার পথে। কোনো আয় না থাকায় এজেন্সি মালিকরা সরকারের কাছে তাদের জামানত ফেরত নিয়েছেন। একই সঙ্গে ব্যবসায়িক লাইসেন্সও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তবে হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) দাবি এ সংখ্যা আরও কম।
মক্কা ও মদিনা ট্রাভেল এজেন্সির মালিক খোরশেদ আলম বলেন, কুলাতে পারছি না। অবস্থা খুবই নাজকু। বাধ্য হয়ে অফিস ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোনো উপায় নেই। শুধুই ব্যয় হচ্ছে। আয় তো নেই। পথে বসে গেছি।
খোরশেদ দীর্ঘদিন ধরে হজ ও ওমরা এজেন্সি চালাচ্ছেন। এজেন্সি পরিচালনার জন্য চারজন কর্মীও ছিলেন। সম্প্রতি তিনজনকে বিদায় করে দিয়েছেন। অফিস ভাড়া চালাতে না পারায় এখন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুধু খোরশেদ আলমই নন, করোনা পরিস্থিতির কারণে তার মতো হাজারো হজ ও ওমরা ব্যবসায়ীর অবস্থা এখন এমন। তাদের অধিকাংশই পথে বসে গেছেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে ৬৭ হাজার হজযাত্রী যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যেতে না পারায় ইতোমধ্যে ৬ হাজার জনের টাকা ফেরত দিয়েছে এজেন্সিগুলো। প্রতিবছর এই খাতে শুধু হজের লেনদেন হয় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। আর ওমরায় আড়াই থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। এ পেশার সঙ্গে মালিক ও কর্মচারী মিলে ৩০ হাজার মানুষ যুক্ত। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশার কয়েক লাখ মানুষ রয়েছে।
মক্কা-মদিনায় হজ ও ওমরার কাজে সরাসরি যুক্ত, এর বাইরে তারা অন্য কিছু করেন না এমন বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা ৫০ হাজার। এই পেশার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অনেক পেশার মানুষ যুক্ত। এজেন্সিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ব্যবসা বন্ধের কারণে অনেকেই কর্মীদের বিদায় করে দিয়েছেন। অধিকাংশ এজেন্সি অফিস ভাড়াও দিতে পারছে না। ব্যবসা বন্ধ। তারা সরকারের কাছে প্রণোদনা চান। তবে সেটি অবশ্যই ঋণের মাধ্যমে।
হাব নেতারা বলছেন, দেশের প্রতিটি খাত ব্যবসা শুরু করে দাঁড়িয়েছে কিন্তু এ সেক্টর এখনও থমকে আছে। সামনে কী হবে, তারা জানেন না। হজ ও ওমরা যাত্রীদের আর পাঠাতে পারবেন কি না তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা। হাব সূত্রে জানা গেছে, তাদের এখন সাড়ে ১২শ হজ এজেন্সি এবং ৫৫০টি ওমরা এজেন্সি তালিকাভুক্ত রয়েছে।
হাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুস সোবহান চৌধুরী জানান, গত এক বছরে হজ বন্ধ থাকায় ২৫০টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আরও অনেকেই এই এজেন্সি গুটিয়ে নেওয়ার পথে রয়েছেন। তবে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার বিষয়টির সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন হাব প্রেসিডেন্ট সাহাদত হোসেন তাসলিম। তিনি বলেন, ব্যবসা গুটিয়ে অনেকে লাইসেন্স ফেরত নিচ্ছেন, এটা ঠিক নয়। এই সংখ্যাট খুব কম। তারা প্রত্যাহার করছেন না।
পূর্ববর্তী পোস্ট