নিজস্ব প্রতিবেদক,
দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ, অনেকে গুটিয়ে নেওয়ার পথে
করোনা মহামারির কারণে পরপর দুই বছর সৌদি আরবে হজ যাত্রীরা যেতে না পারায় বিপাকে পড়েছে হজ এজেন্সিগুলো। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক এজেন্সি তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। তাদের অনেকে সরকারের কাছে জামানত ফেরত নেওয়া শুরু করেছেন।
জানতে চাইলে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, করোনাকালে সকল সেক্টরের কমবেশি ব্যবসা হয়েছে, কিন্তু আমাদের সেক্টরের কেনো ধরনের ব্যবসা হয়নি। এই ধরনের ব্যবসার অফিস খরচ অনেক বেশি। ইতিমধ্যে দুই শতাধিক এজেন্সী তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। অনেকেই জামানত ফেরত নেওয়ার আবেদন করেছেন। অনেকেই মানবেতন জীবন যাপন করছেন।
জানা গেছে, ২০২০ সালে ৬৭ হাজার হজযাত্রী যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যেতে না পারায় ইতোমধ্যে ৬ হাজার জনের টাকা ফেরত দিয়েছে এজেন্সিগুলো। প্রতিবছর এই খাতে শুধু হজের লেনদেন হয় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। আর ওমরায় আড়াই থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। এ পেশার সঙ্গে মালিক ও কর্মচারী মিলে ৩০ হাজার মানুষ যুক্ত। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশার কয়েক লাখ মানুষ রয়েছে। মক্কা-মদিনায় হজ ও ওমরার কাজে সরাসরি যুক্ত, এর বাইরে তারা অন্য কিছু করেন না এমন বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা এক লাখ। এই পেশার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অনেক পেশার মানুষ যুক্ত। এজেন্সিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ব্যবসা বন্ধের কারণে অনেকেই কর্মীদের বিদায় করে দিয়েছেন। অধিকাংশ এজেন্সি অফিস ভাড়াও দিতে পারছে না। ব্যবসা বন্ধ। তারা সরকারের কাছে প্রণোদনা চান। হাব নেতারা বলছেন, দেশের প্রতিটি খাত ব্যবসা শুরু করে দাঁড়িয়েছে কিন্তু এ সেক্টর এখনও থমকে আছে। সামনে কী হবে, তারা জানেন না। হজ ও ওমরা যাত্রীদের আর পাঠাতে পারবেন কি না তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা। হাব সূত্রে জানা গেছে, তাদের এখন সাড়ে ১২শ হজ এজেন্সি এবং ৫৫০টি ওমরা এজেন্সি তালিকাভুক্ত রয়েছে। হাব নেতারা জানান, অনেক হজযাত্রীর টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। তারা অর্থনৈতিক দৈন্যতার মধ্যে রয়েছে। অনেকে লাইসেন্স ছাড়ের কথা ভাবছে। তারা বলছেন, আগে এই ব্যবস্থাপনায় অনেক অনিয়ম ছিল। বর্তমানে অনেক স্বচ্ছতা এসেছে। এক্ষেত্রে যারা অভিজ্ঞ তারা ঝরে পড়লে পরবর্তীতে এই ব্যবস্থাপনা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ৯৬ শতাংশ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যায়। প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারের বাচিয়ে রাখতে হবে। তারা বলছেন, এসব অফিসের অফিস খরচ অনেক বেশি। অন্যান্য সেক্টরে খরচ কমিয়ে ছোট অফিস নিচ্ছেন। হজ এজেন্সী অফিসের অফিস স্থানান্তর করতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। তাছাড়া সৌদি আরব যাওয়ার সময় এহরামের কাপড়, ট্রলিসহ আনুসাঙ্গিক অনেক কিছু বেচাকেনা হয়। সংশ্লিষ্টরাও ভাল নেই। কুহেতুর অভারসিস লি: এর চেয়ারম্যান মুফতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, খুবই বিপদগ্রস্থ আছেন। সরকারের প্রণোদনা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দয়নি। তিনি বলেন, ২০২০ সালে ২৬ ফেব্রæয়ারি ওমরা বন্ধ হওয়ার পর সৌদি সরকার ভিসার টাকা ফেরত দিলেও তা উত্তোলন সম্ভব হয়নি। অবস্থা নাজকু হওয়ায় বাধ্য হয়ে চারজন কর্মী থেকে স¤প্রতি তিনজনকে বিদায় করে দিয়েছেন।
ঢাকা/এসআইএস/এমকেএ