আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
করোনায় বিপর্যস্ত ব্রাজিলে এ পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ লাখেরও বেশি মানুষ। শ্বাসতন্ত্রের এই প্রাণঘাতী রোগে সর্বোচ্চ মৃত্যুর হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে ব্রাজিল আছে দ্বিতীয় স্থানে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার ব্রাজিলে করোনায় মারা গেছেন ৬২৮ জন মানুষ; আর তার মধ্যে দিয়ে দক্ষিন আমেরিকার বৃহত্তম এই দেশটিতে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা পৌঁছাল ৬ লাখ ৪৯৩ জনে।
তবে দেশটিতে বর্তমানে কমে আসছে সংক্রমণ-মৃত্যুর হার, সেই সঙ্গে বাড়ছে করোনা টিকা গ্রহণকারী জনসংখ্যার শতকরা হার।
করোনায় বিপুল সংখ্যক এই মৃত্যুর জন্য ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকেই মূলত দায়ী করছেন সেখানকার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তাদের ভাষ্য, ব্রাজিলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চরমভাবে ব্যর্থ বলসোনারো। কারণ, বরাবরই তিনি লকডাউনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, করোনা টিকার বিরুদ্ধে যাবতীয় প্রচারণাকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে উৎসাহ দিয়েছেন এবং নিয়মিত জনসমক্ষে মাস্ক পরার ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়ে আসছেন।
তবে ৬ লাখ মৃত্যুর দুঃখজনক এই মাইলফলক অতিক্রমের পরও আশার কথা হলো- দেশটিতে বাড়ছে টিকাগ্রহনকারীদের হার। বর্তামানে ব্রাজিলের মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। শতকরা হিসেবে এই হার যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি হিসেব অনুযায়ী, দেশটিতে করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ।
সাও পাওলো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারিবিদ্যা বিভাগের প্রধান আলেক্সান্দ্রে নাইমে বারবোসা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘টিকার ডোজ নিতে অনাগ্রহী- এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম ব্রাজিলে। অনেক দেশই এ কারণে ব্রাজিলকে ঈর্ষা করতে পারে।’
‘এটি সম্ভব হয়েছে, কারণ জনগণ দেশের দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো সম্পর্কে বেশ ভালোভাবে অবগত এবং তারা বুঝেছে, করোনা সংক্রমণকে রুখতে হলে আপাতত টিকার কোনো বিকল্প নেই।’
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো করোনাভাইরসের অতি সংক্রামক ধরন ডেল্টা ব্রাজিলেও হানা দিয়েছে; কিন্তু তবে তার পরও গত কয়েক মাস ধরে সংক্রমণ-মৃত্যু কমছে দেশটিতে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ব্রাজিলে করোনার সংক্রমণের সর্বোচ্চ অবস্থা (পিক) ছিল গত এপ্রিল মাসে। ওই মাসে প্রতিদিন দেশটিতে গড়ে মারা মারা গেছেন ৩ হাজার জন। বর্তমানে এই হার কমেছে ৮০ শতাংশ।
করোনার সংক্রামক পরিবর্তিত ধরন গামার উত্তপত্তিস্থল ব্রাজিল, এ কারণে এই ধরনটিকে ব্রাজিলীয় ধরনও বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই গামার কারণেই ডেল্টা ব্রাজিলে তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেনি।
দেশটির প্রধান শহর রিও ডি জেনেরিওর ফিভেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাণুবিদ ফারনান্দো স্পিল্কি রয়টার্সকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় ডেল্টা ধরন ব্রাজিলে তেমন সুবিধা করতে পারেনি, কারণ এই ধরনটি ব্রাজিলে আসার আগে গামা ধরনের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে এই দেশের মানুষকে।’
‘তার ফলে যে প্রতিরোধী ক্ষমতা মানুষের দেহে তৈরি হয়েছে, তা কাজে লেগেছে ডেল্টার আগমনের পর।’