>সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নামার নির্দেশনা
>গঠন করা হয়েছে সাংগঠনিক টিম
>যাচ্ছে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতির নির্দেশনাও
সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের গতি ধীরে ধীরে বাড়াচ্ছে বিএনপি। আগামী অক্টোবর থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার সব প্রস্তুতিই নিতে শুরু করেছে দলটি। একেবারে তৃণমূল থেকে সব পর্যায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ ঠিক রেখে চলছে সামগ্রিক প্রস্তুতি। এরই মধ্যে দলের ঘোষিত ১৫ দিনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। গঠন করা হয়েছে একাধিক সাংগঠনিক টিম। প্রতিদিনই চলছে জেলা-উপজেলাভিত্তিক বৈঠক, প্রস্তুতি সভা, পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনার কার্যক্রম। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে আজ ভৈরব বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে এ রোডমার্চ।
ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিতে ব্যর্থতার পর এবার সবকিছু গুছিয়ে মাঠে নামার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিরোধী দলগুলো। বিএনপি ঘোষিত ১৫ দিনের কর্মসূচির বাইরে যুগপৎভাবে গণতন্ত্র মঞ্চ ঢাকাকেন্দ্রিক চার দিনের, ১২ দলীয় জোট পাঁচ দিনের, এলডিপি চার দিনের ও গণঅধিকার পরিষদ (নুর) পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা সমকালকে জানান, চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপে তারা শান্তিপূর্ণ ও গতানুগতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এ ধাপের কর্মসূচি থেকে সরকারের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবেন তারা। দাবি না মানলে কিংবা সরকার কঠোর হলে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি কঠোর হবে। এ ধাপে হরতাল-অবরোধের মতো ভিন্ন নামে কর্মসূচির প্রস্তাব করেছেন নীতিনির্ধারকরা। আর সেটা হবে ‘ডু অর ডাই’ আন্দোলন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ দেশে আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। অতীতে যেমন স্বৈরাচারবিরোধী অনেক আন্দোলন হয়েছে, তেমনি এই সরকারের বিরুদ্ধে তারা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আন্দোলন করছেন। আন্দোলন কখন কোন দিকে মোড় নেবে, সেটা একমাত্র রাস্তাই বলে দেবে। কোনো সরকারই জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারেনি। এই সরকারও টিকে থাকতে পারবে না।
দলীয় সূত্র জানায়, আজ ভৈরব থেকে শুরু হয়ে সিলেট পর্যন্ত তিন বিভাগের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে রোডমার্চ। এতে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ ছাড়া কর্মসূচি বাস্তবায়ন টিমে প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, দলনেতা করা হয়েছে দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে।
আগামী শনিবার বরিশাল বিভাগে অনুষ্ঠিত রোডমার্চ ওই দিন সকাল ৯টায় বরিশাল শহর থেকে শুরু হয়ে ঝালকাঠি হয়ে পিরোজপুর গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে। এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান। অন্যদিকে, বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে সেলিমা রহমানকে এবং দলনেতা করা হয়েছে দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুন আর রশিদকে। উপদেষ্টা করা হয়েছে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারকে।
আগামী মঙ্গলবার খুলনা বিভাগীয় রোডমার্চে নেতৃত্ব দেবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করবেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং দলনেতা করা হয়েছে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুকে। ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ রোডমার্চে নেতৃত্ব দেবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। এখানে প্রধান উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম খান এবং দলনেতা করা হয়েছে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে। ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম রোডমার্চে নেতৃত্ব দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। দলনেতা করা হয়েছে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানকে।
সাংগঠনিক টিমের প্রতিটি কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিব, নির্বাহী সদস্য, অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ওই এলাকার সাবেক এমপিদের। সমন্বয়কারী করা হয়েছে ওই বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদককে। সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের টিমের সহযোগী সমন্বয়কারী করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে এক প্রকার গণগ্রেপ্তার শুরু হয়েছে। প্রত্যেক দিন নেতাকর্মীকে আটক করা হচ্ছে। ঘরে থাকলেও গ্রেপ্তার হতে হচ্ছে বলে সাধারণ কর্মীরাও এখন রাজপথে নেমে এসেছেন।
বিএনপি নেতারা জানান, শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি সরকারদলীয় কারও উস্কানিতে পা না দেওয়ার জন্যও বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য এর মধ্যেও কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়ে গেছে। রাত হলেই বাসাবাড়িতে চলছে তল্লাশি। ভয়ভীতির সঙ্গে হামলা, মামলাও চলছে সমানতালে। এসবের পরও তাদের আন্দোলন কর্মসূচি সফল হবে বলে জানান দায়িত্বশীল নেতারা।
বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন জানান, তারা তাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতিও সম্পন্ন করছেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এলাকাভিত্তিক প্রস্তুতি সভা করছেন। আজকালের মধ্যে অন্যান্য প্রস্তুতিও শেষ করবেন।
বিএনপি নেতারা জানান, সরকার ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের মতো যেনতেন নির্বাচন করতে এবারও পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু সে রকম কোনো নির্বাচন তারা হতে দেবেন না। এ জন্য নির্বাচনী তপশিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনের ফসল তারা ঘরে তুলতে চায়। তারা মনে করছে, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে যাবে। অতএব, সেই সময় আমাদের আন্দোলনের গতি অর্জন করা কঠিন হবে। সুতরাং তার আগেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে।
সূত্র জানায়, নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে আন্দোলনের প্রথম ধাপ আগামী ৩ অক্টোবরের পর চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে একযোগে মাঠে থাকার ঘোষণা দিতে পারে বিএনপি। আর ওই আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই এবারের রোডমার্চ, সমাবেশের মতো কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচি দিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর কৌশলের পাশাপাশি একেবারে তৃণমূল নেতাকর্মীকে সক্রিয় করার উদ্যোগ রয়েছে। যাতে শেষ ধাপের কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে রাজপথে ভূমিকা পালন করতে পারেন। এ জন্য সব ধরনের দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয়ভাবে। যেখানেই বাধা, সেখানেই প্রতিরোধ ‘ফর্মুলায়’ নেতাকর্মীকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
সিলেট মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ
সিলেট ব্যুরো জানায়, ভৈরব থেকে রোডমার্চ এসে বিকেল ৪টায় সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হবে। গতকাল বুধবার মাঠে মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ করেছে বিএনপি। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে মাইকিংয়ের পাশাপাশি লিফলেট বিতরণ করেন জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে জেলা সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে লিফলেট বিতরণ করা হয়।
এমরান আহমদ চৌধুরী জানান, তাদের প্রস্তুতি চলছে। বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে সভা, গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করছেন। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত প্রচার চলবে বলে তিনি জানান।
বিএস/এলএম