নিজস্ব প্রতিবেদক
পাবনার কাজিরহাট-আরিচা নৌপথে শুরুতে ছোট বড় মিলে চারটি ফেরি চলাচল করলেও বর্তমানে একটি ছোট ফেরি দিয়ে চলছে যানবাহন পারাপার। এতে কাজিরহাট-আরিচা নৌপথে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঘাটের একমাত্র পন্টুনে রো রো ফেরি ভিড়তে পারছে না। ফলে এ নৌপথে চলাচল করা রো রো ফেরি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তিনটি ছোট (ডাম্প) ফেরি দিয়ে চলছিল পরিবহন পারাপার। তিনটির মধ্যে ফেরি ‘কপোতি’ গত এক সপ্তাহ যাবত বিকল। চলছিল ‘কদম’ ও ‘ক্যামেলিয়া’ ফেরি। ক্যামেলিয়া ফেরিটিতেও গত রোববার যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। যার কারণে বর্তমানে একটি ফেরি দিয়ে চলছে এ নৌপথ।
কাজিরহাট ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, ঘাট থেকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক যানবাহনের নদী পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। পণ্যবাহী পরিবহনগুলোকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে করে পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। প্রচণ্ড শীতে তারা রাস্তার ওপর রাতযাপন করছেন। টার্মিনাল এলাকায় নেই পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার ও টয়লেট সুবিধা। আবাসিক হোটেল ও স্বাস্থ্যসম্মত রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা নেই। কয়েকটি ছোট রেস্টুরেন্ট থাকলেও নিম্নমানের খাবারের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয় ঘাটে আসা ট্রাকচালকরা চরম অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
লালমনিরহাট স্থলবন্দর থেকে ডালভর্তি ট্রাক নিয়ে ঢাকায় উদ্দেশ্যে যাত্রা করা চালক রফিকুল মন্ডল জানান, এই নৌপথ তাদের বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ্বালানি খরচ কমাতে তারা এ নৌপথ ব্যবহার করে ঢাকায় যাতায়াত করেন। অনেক সময় ঘাটে এসে সঙ্গে সঙ্গে ফেরিতে উঠতে পারেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময় কপালে জোটে দুর্ভোগ। ঘাটের বিশৃঙ্খলার জন্য কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই দায়ী। থাকা খাওয়ার তেমন ব্যবস্থা নেই। ট্রাকের মধ্যেই রাত কাটাতে হয়। রেস্টুরেন্টে নিম্নমানের খাবার অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়। সেগুলো খেয়েও অসুস্থ হতে হচ্ছে।
ট্রাকচালক রবিউল ইসলাম গত শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) ঘাটে এসে মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) রাতেও ফেরিতে উঠতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কুষ্টিয়া থেকে গম নিয়ে ঘাটে এসে আটকা পড়েছি। এখানে রাস্তার ওপর অবস্থান করে রাতযাপন করতে হচ্ছে। গভীর রাতে প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশা পড়ে। থাকা-খাওয়া সমস্যার পাশাপাশি চুরি-ছিনতাইয়ের আতঙ্ক নিয়ে থাকতে হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা ট্রাকচালক মহিবুল জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘাটে আসলেও মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত ফেরিতে ওঠার সিরিয়াল পাইনি। মাত্র একটি ফেরি দিয়ে ট্রাক ও মাইক্রোবাস পারাপারের কাজ চলছে। পাঁচ দিন ঘাটে অবস্থান করার পর আজ ঘাট কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়ার কথা জানায়। বাধ্য হয়ে ট্রাক ঘুরিয়ে সেতু হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গতবছর কাজিরহাট-আরিচা নৌপথটি চালু হয়। ফলে পাবনা, নাটোর, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার পণ্যবাহী পরিবহন এ নৌপথ ব্যবহার করে এর গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসির সমন্বয়হীনতার কারণে নৌপথটি মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে বলে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা মনে করেন।
আমিনপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলম বলেন, রাস্তায় অবস্থান করা পণ্য পরিবহনগুলোর নিরাপত্তার জন্য একটি টহল দল দিনরাত অবস্থান করছে। তারা সবসময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ট্রাকচালকরা কোনো প্রকার নিরাপত্তাহীনতায় নেই। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে।
কজিরহাট ফেরিঘাটের টার্মিনাল সুপারিনটেন্ডেন্ট আব্দুল কাইয়ুম বলেন, একটি মাত্র ফেরি দিয়ে বর্তমান ঘাট পরিচালনা করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। ঘাটে দৈন্যদশা চলছে। চরম অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্য অফিস চালাতে হচ্ছে। তিনটি ফেরির মধ্যে দুটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় আরিচা ঘাটে মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে একটি ফেরি দেওয়া হলে সেটি ট্রায়ালের জন্য নদীপথ পারি দেওয়ার সময় মাঝপথে ডুবোচরে আটকে যায়। পরে সেখান থেকে ফেরি ছাড়িয়ে নিয়ে এই নৌপথ থেকে কৌশলে অন্য ঘাটে নেওয়া হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি পাবনার বেড়া উপজেলার কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, শুরুতে এ নৌপথে দুটি রো রো ফেরি (বড়) ও দুটি ছোট (ডাম্প) ফেরি দিয়ে পরিবহন পারাপার করা হচ্ছিল। এতে করে ঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছিল। তবে সম্প্রতি নদীর পানি নিচে নেমে গেলে পন্টুন জটিলতায় রো রো ফেরি দুটি ঘাটে ভিড়তে পারছিল না। পরে রো রো ফেরি বেগম সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়া ও রো রো ফেরি গোলাম মওলাকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ছোট ফেরি ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০টি পরিবহন পার করতে পারছে। তবে প্রতিদিন যে পরিমাণ পরিবহন এ ঘাটে আসছে, তাতে জরুরিভাবে নতুন ঘাট ও পন্টুন স্থাপন করে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো না হলে এ বিড়ম্বনা কাটানো সম্ভব হবে না। পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাওয়ার তাগিদ দিচ্ছি। এখানে ফেরিঘাট হয়ে সুবিধার পরিবর্তে মানুষের কষ্ট আরও বাড়ছে।
বিএসডি/এসএ