নিজস্ব প্রতিবেদক
দক্ষিণ আফগানিস্তানের কান্দাহার বিমানবন্দরে অন্তত তিনটি রকেট হামলা চালিয়েছে তালেবান। রোববার (১ আগস্ট) বিদ্রোহীদের এক মুখপাত্র এমন দাবি করেছেন। আফগান সরকারি বাহিনী যাতে বিমান হামলা চালাতে না পারে তা প্রতিহত করতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির। তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, কান্দাহার বিমানবন্দরে হামলা করা হয়েছে। কারণ আমাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালাতে এটি ব্যবহার করছে শত্রুরা।
রকেট হামলার পর বিমানবন্দর থেকে সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে জানায় আফগান কর্তৃপক্ষ। হামলায় রানওয়ের অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে তালেবান আফগানিস্তানের তিনটি বড় শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করলে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে হেরাত, লস্কর গাহ ও কান্দাহারের বিভিন্ন অংশে প্রবেশ করেছে বিদ্রোহীরা।
সেপ্টেম্বর নাগাদ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসার পর গ্রামীণ অঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক সফলতা শেষে এবার বড় শহরে হানা দিয়েছে তালেবান।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে বড় ধরনের লড়াইয়ে মানবিক সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। লড়াইয়ে সরকারি বাহিনী কতটা সময় টিকে থাকতে পারবে তা নিয়ে তো সন্দেহ রয়েই গেছে।
আফগান ভূখণ্ডের অর্ধেকটা এখন তালেবানের দখলে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে পাকিস্তান ও ইরানের সঙ্গে লোভনীয় সীমান্ত ক্রসিংও এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। কান্দাহারের এমপি গুল আহমাদ কামিন বলেন, শহরটি তালেবানের হাতে পতন হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। মানবিক সংকট প্রকাশ্য হয়ে উঠছে।
তিনি বলেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় শহরের পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। গত ২০ বছরের মধ্যে লড়াই সবচেয়ে তীব্র রূপ নিয়েছে।
তালেবানের নজর এখন কান্দাহারের দিকে জানিয়ে তিনি বলেন, এই শহরটিকে অস্থায়ী রাজধানী করতে চায় বিদ্রোহীরা। যদি শহরটির পতন ঘটে, তবে এ অঞ্চলের পাঁচ কিংবা ছয়টি প্রদেশও সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
এছাড়া হেরাতের দক্ষিণাংশে তালেবান যোদ্ধারা প্রবেশ করায় দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই তীব্র হয়ে উঠেছে। শহরটির পাঁচটি এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই চলার খবর পাওয়া গেছে।
সরকারি বাহিনীর সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিমান হামলার সমর্থন নিয়ে সরকারি বাহিনী শহরটির বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকাটি ফের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। শুক্রবার এই বিমানবন্দরের কাছেই জাতিসংঘের একটি কম্পাউন্ডের বাইরে এক রক্ষী নিহত হন।
জাতিসংঘের অভিযোগ, তালেবান ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শহরটির অল্প কয়েকটি এলাকা নিরাপদ রয়েছে এবং কিছু লোক নিজেদের রক্ষার জন্য অস্ত্র তুলে নিয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হেলমান্দের রাজধানী লস্কর গাহের গভর্নরের কার্যালয় থেকে বিদ্রোহীরা কয়েক শ মিটার দূরে রয়েছে। শনিবারও তারা অগ্রসর হয়েছিল। কিন্তু আফগান বাহিনীর কমান্ডার বলেন, তখন সরকারি বাহিনীর হামলায় বড় ধরনের হতাহত নিয়ে তালেবানরা পিছু হটে। পরে আবার অগ্রসর হয়েছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন আফগানিস্তানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ দূত টমাস নিকলসন। তিনি বলেন, তালেবান এখন এমন কিছু চাচ্ছে, যেটা তারা আগে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। অর্থাৎ তারা ইসলামিক আমিরাত প্রতিষ্ঠার প্রতি জোর দিচ্ছে।
বিএসডি/এমএম