আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
তালেবান গত মাসে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক একটি ফ্লাইট পাকিস্তানের উদ্দেশে কাবুল ছেড়েছে। মার্কিন-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর চলে যাওয়ার পর সোমবার বাণিজ্যিক এই ফ্লাইটের চলাচল শুরু হওয়ায় দেশ ছাড়তে মরিয়া আফগানদের জন্য কিছুটা আশা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী গত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত কাবুল থেকে দুই সপ্তাহের অভিযানে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেয়। বিশৃঙ্খলপূর্ণভাবে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার পর কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়, বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের বিমানের চলাচল। পরে কাতার এবং অন্যান্য দেশের সহায়তা নিয়ে এই বিমানবন্দর সচলে জোর তৎপরতা শুরু করে দেশটির নতুন শাসকগোষ্ঠী তালেবান।
ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, সোমবার পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) একটি বিমান কাবুলে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে ইসলামাবাদে ফিরে গেছে। পিআইএর ওই ফ্লাইটে করে অন্তত ৭০ যাত্রীকে ইসলামাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে; যাদের বেশিরভাগই আফগান এবং তারা বিশ্বব্যাংকের মতো অন্যান্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরতদের আত্মীয়-স্বজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ব ব্যাংকের একজন কর্মী পিআইএর ওই ফ্লাইটে কাবুল ছেড়েছেন। তিনি বলেন, আমাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমার শেষ গন্তব্য তাজিকিস্তান। যদি নারীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং কাজ করতে পারেন, তবেই আমি এখানে ফিরে আসব।
২২ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘তিনি এক মাসের সফরে পাকিস্তানে যাচ্ছেন। এটা ছুটি কাটানোর মতো। খারাপ লাগছে, আবার খুশিও। খারাপ লাগছে দেশের জন্য। কিন্তু কিছু সময়ের জন্য দেশ ছাড়তে পারায় খুশিও লাগছে।’
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইট পুনরায় চালু করাই এখন আফগানিস্তানের কট্টর ইসলামপন্থী শাসকগোষ্ঠী তালেবানের জন্য কঠিন পরীক্ষা হিসেবে হাজির হয়েছে। একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানীর পর কাবুলের দখল নেওয়া তালেবান যাদের যথাযথ নথিপত্র আছে, তারা দেশ ছাড়তে পারবেন বলে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তালেবানের শাসনের ভয়ে লাখ লাখ মানুষ দেশ ছাড়তে মরিয়া হয়ে আছেন। কাবুলে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচল শুরু হলে অনেকেই দেশ ছাড়তে পারেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এদিকে, চার সপ্তাহের বেশি সময় পর তালেবানের ভয় কাটিয়ে বিমানবন্দরের কর্মীরাও কাজে ফিরতে শুরু করেছে। যদিও অনেক নারী এখনও কর্মস্থলে যোগদানের ব্যাপারে দ্বিধায় ভুগছেন।
বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই নারীর একজন বলেন, এখানে কাজ করার জন্য আমাদের হত্যা করা হবে কি-না আমি জানি না।