আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সকল বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মাঝেই অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে গোটা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিল সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন তালেবান। ফলে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিসহ মন্ত্রিপরিষদের একাধিক সদস্য। সংকটময় এমন পরিস্থিতিতে কাবুলের মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের এরই মধ্যে সেখানকার বিমানবন্দরে সরিয়ে আনার কথা জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
সোমবার (১৬ আগস্ট) প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজ। সেখানে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছে যে, আফগান দূতাবাসের সব কর্মীকে কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের একটি ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মার্কিন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দফায় দফায় এসব কর্মীদের বিমানে করে এখানে আনা হচ্ছে। কর্মচারীদের স্থানান্তরের এই প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য অতিরিক্ত প্রায় ছয় হাজার সেনা আফগানিস্তানে পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, মার্কিন সেনাবাহিনীর অস্ত্রধারী সদস্যরা বিমানবন্দরটি দিনরাত পাহারা দিচ্ছেন। যদিও কাবুলের অন্য এলাকাগুলো থেকে এখনো গোলাগুলির শব্দ আর সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এ দিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে চলমান সংঘাতের সমাপ্তি হয়েছে বলে এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন তালেবান। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কোথাও জানিয়েছে গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা।
মোহাম্মদ নাইম নামে তালেবানের ওই নেতা কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে তালেবান কখনোই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে চায় না। এবার আমাদের দেশ শাসনের ধরন ও রাষ্ট্রীয় গঠন কাঠামো খুব শিগগিরই জনসম্মুখে আনা হবে।
তালেবানের মুখপাত্র নাইম দাবি করেন, সম্পূর্ণ শরীয়াহ আইনের ভেতর থেকেই নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে জনসাধারণের বাক স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলছিলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তালেবান শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায়। ইতোমধ্যে কয়েকটি রাষ্ট্রের সঙ্গে শুরু হওয়া যোগাযোগের চ্যানেলগুলোকেও আরও উন্নত করা হবে।
আল-জাজিরাকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে তালেবানের ওই নেতা বলেন, আসন্ন যে কোনো সংকট নিরসনের জন্য আমাদের সঙ্গে বসতে সকল দেশ ও অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা ও ন্যাটোর সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। মূলত এরপর একই বছরের মে মাস থেকে আফগানিস্তান দখলে অভিযান শুরু করে তালেবান যোদ্ধারা।
যার ধারাবাহিকতায় তারা অবিশ্বাস্য ও দ্রুততার সঙ্গে মাত্র আড়াই মাসেই দেশের ৩৪টি প্রদেশের ২৮টি দখল করে নেয়। গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা বর্তমানে কাবুলে অবস্থান করছে। এরই মধ্যে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি পদত্যাগ করেছেন। ফলে দেশটিতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে।
বিএসডি/এমএম