নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা দল ছেড়ে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) যোগ দিয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদ্য সাবেক সদস্য মো. শামসুল ইসলাম, উত্তর সাতকানিয়া যুবলীগের নেতা ও কেঁওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মনির আহমদ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আবু তালেব সিকদার, সাহেব মিয়া এবং ইউপি সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী রোকেয়া বেগম।
গত ১৯ জুন থেকে ২১ জুনের মধ্যে তারা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি মো. এয়াকুব আলীর কাছে সদস্যপদের ফরম জমা দেন।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল ইসলামের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়ন এলাকায়। ওই এলাকায় তার মালিকানাধীন কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার অত্যন্ত অনুগত এই নেতার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে অর্থ সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিপ্লব বড়ুয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পদটি বাগিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। বিপ্লব বড়ুয়ার কারণে গণভবনে অবাধে যাতায়াত ছিল তার।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হলে গা-ঢাকা দেন শামসুল। পলাতক অবস্থায় গত ২ মার্চ চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এলডিপির এক নেতা জানান, সম্প্রতি জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান শামসুল ইসলাম। এরপর সাতকানিয়া উপজেলা এলডিপির এক নেতার মধ্যস্থতায় কয়েকদিন আগে ঢাকায় গিয়ে কর্নেল অলির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেখান থেকে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯ জুন এলডিপিতে যোগ দেন।
কেরানিহাটের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন কেঁওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মনির আহমদ। শুরুতে তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলামের রাজনীতি করতেন। এরপর আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মো. নদভীর সঙ্গে রাজনীতি করেন।
সবশেষ ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। আওয়ামী লীগের এই নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জেলা পরিষদের সদস্য পদপ্রার্থী হয়েছিলেন।
এ ছাড়া, আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে এলডিপিতে যোগ দেওয়া আবু তালেব সিকদার, সাহেব মিয়া এবং রোকেয়া বেগম তিনজনই কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তাদের মধ্যে আবু তালেব সিকদার ও সাহেব মিয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং রোকেয়া কেঁওচিয়া ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এদের মধ্যে আবু তালেবও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সম্প্রতি জামিনে বের হন।
জানা যায়, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমেদ চন্দনাইশ উপজেলা ও আংশিক সাতকানিয়া নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সদ্য আওয়ামী লীগ ছেড়ে এলডিপিতে যোগ দেওয়া নেতাদের সবার বাড়ি সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়ন এলাকায়। এই ইউনিয়নটি সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ আসনের অন্তর্ভুক্ত।
এ কারণে কেঁওচিয়ায় এলডিপির প্রভাব রয়েছে। স্থানীয়দের কারও কারও অভিযোগ, বছরের পর বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত থেকে এবং দলটি থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা আদায় করে এখন তারা এলডিপিতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. শামসুল ইসলাম বলেন, অলি সাহেব আমার এলাকার এমপি ছিলেন। আমি অন্য কাজে ঢাকায় গিয়ে উনার সঙ্গে দেখা করেছি। মূলত আমি কেঁওচিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার চিন্তা করেছিলাম। আমার এলাকার সমর্থকেরা জোর করে এলডিপিতে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। পরিবারসহ ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
এলডিপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মনির আহমদ বলেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক ছিলাম। দলে আমার কোনো পদপদবি ছিল না। বর্তমানে আমি এলডিপির সমর্থক হিসেবে ফরম পূরণ করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে আবু তালেব বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে কিছুই পাইনি। তবে মানুষের সঙ্গে কোনো অন্যায় আচরণ ও অত্যাচার করিনি। তারপরও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। তাই সদস্য ফরম পূরণ করে এলডিপিতে যোগদান করেছি।
সাবেক ইউপি সদস্য সাহেব মিয়া বলেন, আমাদের (কেঁওচিয়া) পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান আলী আওয়ামী লীগের ছিলেন। তাই ইউপি সদস্য হিসেবে বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম। কর্নেল অলি আহমদ একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। তাই উনার দলে যোগ দিয়েছি। আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে তার পক্ষে কাজ করব ইনশাল্লাহ।
ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উত্তর সাতকানিয়া আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া বেগমের কাছে দলবদলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এ বিষয়ে এলডিপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি মো. এয়াকুব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে তারা প্রাথমিক সদস্যপদ পূরণ করেছেন। তারা আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না বলে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। এমনিতে হয়তো নানা কারণে চাপের মুখে কর্মসূচিতে গিয়েছেন। তবে তারা যোগ দেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে। বিষয়টি নিয়ে দলীয়ভাবে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এ রকম কেউ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে এলডিপিতে যোগ দিলে তাকে তদন্ত করে বরখাস্ত করা হবে।