কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক। মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার রতনপুর বাজার। বাজার থেকে পশ্চিম দিকে একটি সড়ক প্রবেশ করেছে। আঁকাবাঁকা সড়কে দুই কিলোমিটারের পরেই বড় ধর্মপুর। এখানে মাথা তুলে আছে ছোট বড় পাহাড়। দুইটি পাহাড়ে প্রথমবারের মতো চা চাষ করা হয়েছে। চা বাগানের উদ্যোক্তা তারিকুল ইসলাম মজুমদার। বাগানটি দেখতে প্রায়ই বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন।
ধর্মপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুইটি মাঝারি উচ্চতার পাহাড়। পাহাড়ের নিকটে যেতেই ঝাঁক বেঁধে উড়াল দেয় একদল বট কোয়াল পাখি। পাহাড়ের উপরে ও ঢালুতে চা গাছের চারা লাগানো হয়েছে। পৌষের কনকনে শীতেও স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে সবুজ চা গাছ। পাহাড়ের উপরে বসানো হয়েছে পানির ট্যাংকি। সেখান থেকে পাইপ দিয়ে পানি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। চা বাগানে শেড ট্রি হিসেবে কড়ই গাছ লাগানো হয়েছে। গাছ বড় হতে সময় লাগাবে তাই এলোমেন্ডা নামের ছোট গাছ লাগানো হয়েছে। যা চা গাছকে সাময়িক ছায়া দিচ্ছে। কয়েকজন নারী পাহাড় পরিষ্কার করছেন। কিছু দর্শনার্থী এসেছেন বাগান দেখতে। সবার চোখে বিস্ময়।
কামাল হোসেন নামের একজন বলেন, লালমাই পাহাড়ের মাটিতেও চা সম্ভব। এখানে মাটিতে কমলা চাষ,মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে। কিন্তু চা চাষ প্রথম। এটি চাষ করা গেলে পাহাড়ের জমি আর পরিত্যক্ত থাকবে না।
উদ্যোগক্তা তারিকুল ইসলাম মজুমদার জানান, তার শখ ছিলো চা বাগান ক্রয় করার। সে জন্য সিলেট এলাকায় গিয়ে চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যাটে বলে এক হয়নি। তার এক বন্ধু আছেন মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলার খাসিয়া সম্প্রদায়ের একটি পুঞ্জীর মন্ত্রী জিডি সান। তিনি একদিন তার লালমাই পাহাড়ের ভূমি ঘুরে দেখেন। জিডি সান মতামত দেন এখানে চা চাষ সম্ভব। তার পরামর্শে তিনি গত মার্চে তিন হাজার চা গাছ লাগান। এগুলোর গ্রোথ ভালো দেখে তিন মাস পর আরো তিন হাজার চারা লাগান। তার অল্প কিছু চারা বন্য প্রাণী নষ্ট করেছে। অন্য গুলো ঠিক আছে। তিন বছর পর পাতা তুলতে পারবেন। প্রায় এক একর পাহাড়ে তার চা বাগান। এখানে তার এক সাথে সাড়ে ছয় একর ভূমি আছে। তিনি পুরো ভূমিতে চা বাগান করবেন বলেও পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, তিনি চান অন্যরা যেন তার মতো এগিয়ে আসে। প্রয়োজনে তিনি চা পাতা প্রস্তুতের মেশিন স্থাপন করবেন।
জিডি সান বলেন, তারিক ভাই শৌখিন মানুষ। তার আগ্রহ চা চাষের। লালমাই পাহাড়ের মাটি দেখে মনে হয়েছে এখানে চা চাষ সম্ভব। পরে মাটি নিয়ে পরীক্ষা করেছি। মাটি চা চাষে উপযুক্ত। ভালো ভাবে তদারকি করলে ভালো ফলন আসবে। পাহাড়ের ভূমি ফেলে না রেখে চা চাষ করা যেতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা চা চাষের এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ফলন দেখে মূল্যায়ন করা যাবে। এছাড়া চা পাতা প্রস্তুতে মেশিন স্থাপন প্রয়োজন। সব ব্যবস্থা করা গেলে চা চাষে সাফল্য আসবে।
বিএসডি/ এলএল