বর্তমানে বিশ্বে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সবচেয়ে খারপ অবস্থা ভারতে। প্রতিদিন দৈনিক সংক্রমণ তিন লাখ ও মৃত্যু চার হাজারের ঘরে। এমতাবস্তায় পুরো দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। যা নিয়ে হচ্ছে তীব্র সমালোচনা। এর মধ্যেই বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে ভ্যাকসিন পাঠানোর সিদ্ধান্তে নিয়েছে নরেদ্র মোদির সরকার।
সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজর’র এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জোগান না থাকায় তৃতীয় পর্যায়ের ভারতের একাধিক রাজ্য করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়নি। এতে করে তীব্র সমালোচনার মুখে মোদি সরকার। ঠিক এমন সময়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনার ভ্যাকসিন পাঠানোয় প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে মোদিকে।
তবে সমালোচনার মুখে কিছুটা পিছু হটলেও, প্রতিবেশী দেশগুলোতে আগামী দিনে ভ্যাকসিন পাঠাতে ভারত সরকার অনড়। কূটনৈতিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই বলে দিল্লির সূত্র জানিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাকিস্তান ছাড়া এ মুহূর্তে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, নেপাল এবং মলদ্বীপে করোনার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে নেপাল ও মলদ্বীপে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। মলদ্বীপে এই মুহূর্তে সংক্রমণের হার প্রায় ৬০ শতাংশ। ইতোমধ্যে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এদিকে করোনার প্রকোপে নেপালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশগুলোতে ভ্যাকসিন প্রয়োগের কার্যক্রমকে প্রাধান্য দিচ্ছে নয়াদিল্লি। তাদের মতে, ভারতীয় উপমহাদেশে বৃহত্তম শক্তিশালী দেশ হিসেবে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখার ক্ষেত্রে বিপদে-আপদে প্রতিবেশীদের পাশে থাকা জরুরি। তাই পরিমাণে কম হলেও, ভ্যকাসিন রফতানি করা হবে।
এদিকে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, রোববার (১৬ মে) করোনায় নতুন করে চার হাজার ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ৭০ হাজার ২৮৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আর একদিনে নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন তিন লাখ ১১ হাজার ১৭০ জন। এতে আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটি ৬৪ লাখ ৮৪ হাজার ৭৭ জনে দাঁড়িয়েছে।
ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫৮৫ জনকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত ১৮ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার ১৬৪ ভারতীয়কে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ব্র্যান্ডের ৩ কোটি ভ্যাকসিনের জন্য অগ্রিম টাকা পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে এই তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ছিল সিরাম ইনস্টিটিউটের। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিরামের কাছ থেকে প্রথম চালানে ৫০ লাখ ও দ্বিতীয় চালানে ২০ লাখসহ মোট ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। তৃতীয় চালান এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আসার কথা জানা গিয়েছিল বিভিন্ন সূত্রে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই ৭০ লাখ ডোজের পর সিরামের কাছ থেকে আর কোনো ভ্যাকসিন আসেনি বাংলাদেশে।