বর্তমান সময় ডেস্ক:
চার শতাধিক যাত্রী নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এমভি অভিযান -১০ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। চাঁদপুর ও বরিশাল টার্মিনালে লঞ্চটি থামে এবং যাত্রী ওঠানামা করেন। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পৌঁছলে রাত ৩টার দিকে এতে আগুন ধরে যায়।
স্মরণকালের ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ৮০ জনেরও বেশি যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় অনেক যাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে বেঁচে গেলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছেন শতাধিক। লঞ্চে কেন আগুন লাগল এ নিয়ে নানা কৌতুহল রয়েছে অনেকের মনে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক পরিচালক মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, সুগন্ধা নদীতে আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে রাসায়নিক পদার্থ ছিল, যার বড় অংশ ছিল কেরোসিন। এ ছাড়া দাহ্যপদার্থ লুব্রিকেট ও হাইড্রোলিক অয়েল ছিল। পাশের স্টোর রুমেও ছিল বিপুল পরিমাণ তেল। এসব পদার্থ লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে থাকলে যেমন নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকতে হয়, তা ওই লঞ্চে ছিল না।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক পরিচালক বলেন, ইঞ্জিন রুমের তেলের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুন ধরলে ড্রাম গরম হয়ে ভেতর থেকে তেল বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে। মুখ বন্ধ থাকায় বেরিয়ে আসতে না পারায় কয়েশ টন শক্তি উৎপাদন করে ড্রামগুলো বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরিত হলে আগুনের তীব্রতা আরও বাড়ে। এর পর পাশের ড্রামগুলোও বিস্ফোরিত হতে থাকে। বিস্ফোরণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কেরোসিন তেলে আগুন লাগলে প্রচুর কালো ধোঁয়া উৎপন্ন হয়। ইঞ্জিন রুম পানির মধ্যে হওয়ায় ধোঁয়া পাইপসহ বিভিন্ন ফাঁকা দিয়ে ওপরে চলে যায়। ধোঁয়ায় জন্য দম বন্ধ হয়ে মানুষ মারা যায়।
এই অগ্নিনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় লোকজন নিজেদের বাঁচানোর সময় অনেক কম পেয়েছে। এছাড়া গভীর রাতে লোকজন ঘুমিয়ে ছিল। ফলে প্রাণহানি বেশি হয়েছে।
প্রাণহানির জন্য অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক এই পরিচালক। তিনি বলেন, অগ্নিনিরাপত্তা পদ্ধতি, আগুন শনাক্তের যন্ত্র ও সতর্কীকরণ পদ্ধতি দুর্বলতা ছিল। ফলে লোকজন যেখানে ছিল, সেখানেই দগ্ধ হয়ে ও ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছে। এ ছাড়া ইঞ্জিন রুমে তেল রাখতে হলে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে সেটা আলাদা করতে হয়। সেটা না করায় দুর্ঘটনার পর মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি বেড়েছে।
বিএসডি/ এলএল