আন্তর্জাতিক ডেস্ক,
আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলায় ১৩ মার্কিন সেনার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ যুদ্ধ! মার্কিন সামরিক নীতি-নির্ধারকদের ধারণা ছিল, বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর অন্তত ছয় মাসের আগে আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালেবান দখল করতে পারবে না।
কিন্তু মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। মার্কিন নীতি-নির্ধারকদের ধারণা ভুল প্রমাণ হয়েছে। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর কাবুল বিমানবন্দর থেকে মার্কিন সেনাদের সহায়তাকারী আফগানদের সরিয়ে নিতে গিয়ে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে মার্কিন সেনারা অরক্ষিত অবস্থার মধ্যে রয়েছে। মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল কেনিথ ফ্রাঙ্ক ম্যাককেনজি সিএনএনকে বলেন, জঙ্গি সংগঠন আইসিস-কে আরো হামলা চালাতে পারে। আগামী তিন দিন মার্কিন সেনাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক সময়।
যুক্তরাষ্ট্রের শোকবহ দিনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন দায়ীদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আইসিস-কের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। ধারণা করা হচ্ছে, এই জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাইডেন বিমান বা ড্রোন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করেছেন। তাহলে এর মানে দাঁড়াচ্ছে যে, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান শেষ হচ্ছে না বরং ধরনটা বদলাচ্ছে।
কাবুলের বিমানবন্দরে হামলায় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, সেখানে মার্কিন সেনাদের অবস্থা এখন খুবই নাজুক। গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরও এই হামলা হয়েছে। তারপরও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুদের ওপর নির্ভর করাটা যে ভুল হয়েছে, তা মানতে নারাজ প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জো বাইডেন নিজেকে পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু আফগানিস্তানে গত কয়েক দিনের বিশৃঙ্খলা ও দুর্যোগে তার সেই দক্ষতা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় বক্তৃতায় বলেছেন, তালেবান হুট করেই ক্ষমতায় আসবে না। কাবুল থেকে ভিয়েতনামের সায়গন স্টাইলে ফিরবে না যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তার বক্তব্য ভুল প্রমাণ হয়েছে। এ অবস্থায় বড় রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ছেন তিনি। ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের কাছে বড় ধাক্কা খেতে পারে তার দল।
এদিকে কাবুলে বোমা হামলায় মার্কিন সেনা হতাহতের পর বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি থেকে জো বাইডেনের পদত্যাগ অথবা অভিশংসনের দাবি উঠতে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার দলের এক জরুরি বৈঠকে প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থি বাইডেন প্রশাসনের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেককে জবাবদিহি করতে হবে। রিপাবলিকানদের অনেকে মনে করেন কাবুলের এই ঘটনা বাইডেনের জন্য স্থায়ী কলঙ্কের দাগ হয়ে থাকবে। ম্যাককার্থির একজন সহকারী ইতিমধ্যে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন অযোগ্য।
নিউইয়র্কের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান এলিস স্টেফেনিক এক টুইটে বলেছেন, জো বাইডেনের হাতে এখন রক্ত। এ ধরনের জাতীয় নিরাপত্তা ও মানবিক বিপর্যয়ের জন্য একমাত্র দায়ী হলো প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দুর্বল ও অদক্ষ নেতৃত্ব। ‘কমান্ডার-ইন-চিফ’ হওয়ার অযোগ্য তিনি।
বিএসডি/এএ